পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So বৃহৎ বঙ্গ অনেকখানি প্ৰয়োজন আছে ; জমিজমার হিসাব, বাজার দর, কঁসা, তামা, পিত্তল প্ৰভৃতির দর ও ওজন, শস্যাদির দরের হিসাব প্রভৃতি বিষয়ে চাষার মুখে মুখে যাহা এখনও করিতে পারে, আমাদের এম. এ. উপাধিধারী গণিতের অধ্যাপকগণ অনেক সময়ে তাহা অনেক বেশী সময়ে কষ্টেস্ষ্টে করিতে পারেন। চাষার কাগজে-কলমে অভ্যস্ত নহে, নিতান্ত জটিল অঙ্ক হইলে তাহদেরই মধ্যে অক্ষরজ্ঞানবিশিষ্ট মাতকাবর দুই একজন লোক তাহা ‘কালী” করিতে বসে। নিতান্ত জটিল অঙ্ক না হইলে তাহারা মসি, মন্তাধার বা কাগজের সহায়তা লয় না। এই জন্য যাহারা “কালী” করিতে জানে, চাষাসমাজে তাহদের প্রভূত মান। এই নিয়শ্রেণীর লোকদের অতি সুন্ম হিসাব, যাহা তাহারা অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমাধা করে, তাহা ভুল হয় না । কিন্তু এখনকার শিক্ষিত লোক সেইরূপ করিতে গেলে দ্বিগুণ চৌগুণ সময় তো লইবোনই —তাহাতে অনেক সময়ই ভুল হইয়া থাকে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বাঙ্গলার সাহায্যে সমস্ত অধিতব্য বিষয়ের জ্ঞান বিস্তার করিবেন। ১৮৩৫ খৃঃ অব্দের পূর্বে যে বিষয়টা স্বতঃসিদ্ধ ছিল, -জগতের সমস্ত জাতি যে সকল কথা নিজের ভাষায় শিখে, ৩০ ॥৪০ বৎসরের মধ্যে জাপান যেভাবে সৰ্ববিষয়ের জ্ঞান তাহদের নিজের ভাষায্য শিখাইয়া উন্নতির তুঙ্গশূঙ্গে আরোহণ করিয়াছেন,- এখনও হায়দ্রাবাদের নিজাম বাহাদুর যাহা নিজরাজ্যে প্ৰচলন করিয়াছেন, তাহা এদেশে অগ্ৰাহ হইয়া আছে। স্বদেশের ভাষায় জ্ঞান প্রচার করব বিরুদ্ধে কতকগুলি লোক দাড়াইয়াছেন, ইহাদের মাথা অনেকটা ইংরেজী শিক্ষায় বিগড়াইয়া গিয়াছে। যিনি এখন অঙ্ক শিখেন, তিনি বিদেশী ভাষায় তাহা শিখিতে অৰ্দ্ধেকের বেশী সময় সেই বিষয়ের উপযোগী ভাষা শিখিতে ব্যয় করেন। আসল বিষয় শিখিতে আর কতটুকু সময় থাকে ? যাহা হউক এখন যখন বাঙ্গলা ভাষায় গণিতাদি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা হইতেছে, তখন আমাদের গণিতের যে সকল সুত্ৰ বিলাতী পুস্তকে পাওয়া যায় না, অথচ নিত্যকার জীবনযাত্রার পক্ষে যাহা অপরিহাৰ্য্য, সেইগুলি কি শুভঙ্করের আর্য্যা হইতে শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত নহে ? এই আৰ্য্যাগুলিতে কড়া, কাঠা, ক্রান্তি প্ৰভৃতি যে সকল শব্দ আছে-তােহা প্রয়োজন হইলে, পাউণ্ড, টাকা, পয়সা, পেন্স প্রভৃতি এখনকার প্রচলিত গণিতাঙ্কে পরিণত করিয়া প্রাচীন আৰ্য্যাগুলির অনুসরণপূর্বক সূত্র রচনা করিতে বোধ হয় এখনকার অধ্যাপকেরা অসমর্থ হইবেন না। অনেক সময়ে দেশীয় সাপ, দর এবং মূল্যাদি বাঙ্গলাদেশের চিরাগত সংস্কারাধীন করাতে বিশেষ দোষ নাই, তবে যখন বিলাতের সঙ্গে কারবারের প্রয়োজন হইবেই, তখন দুইরূপ গণিতাঙ্কে মূল্য ও ওজনের সম্বন্ধে পারিভাষিক শব্দজ্ঞানের ব্যবস্থা রাখা উচিত। বড়ই দুঃখের বিষয়, যে সকল সুত্ৰ শিখিয়া এতদ্দেশের লোকেরা এত সহজে গণনাকাৰ্য্য নির্বাহ করিত, সেই অসামান্য বিদ্যা-অশিক্ষিতাপটুতাআমরা বিবেচনাহীন হইয়া হারাইতে বসিয়াছি। রয়াল এসিয়াটিক সোসাইটীর ১৮১৭ খৃষ্টাব্দের সংখ্যায় হিন্দুদিগের গণিতশিক্ষা-সম্বন্ধে যে প্ৰবন্ধ প্ৰকাশিত হইয়াছিল, তৎপ্ৰতি ଅirce আকর্ষণ করিতেছি। পাদ্ৰী লঙ সাহেব শুভঙ্কায়কে “The Cocker of lengal* ( বাঙ্গালাদেশের ‘ককার”) উপাধি দিয়াছেন। এই নামে শুভঙ্করের কোন গৌরব বৃদ্ধি য়ৰ