পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sebo বৃহৎ বঙ্গ ‘রূপেশ্বরী মন্দিরে আছে। টলেমির নির্দেশ অনুসারে “বেনিয়াজুড়ম” দাসরার নিকটবৰ্ত্তী । এই “বেনিয়াজুড়িম” এখনও বিদ্যমান-ইহার বর্তমান নাম “বানিয়াজুরী”। গ্রামটীতে কিছু কিছু প্ৰাচীন চিহ্ন আছে। সাহেবের অজ্ঞতাবশতঃ এই তিন গ্রামের ঠিকানা না জানিয়া যেখানে সেখানে উহাদের স্থান নির্দেশ করিয়াছেন। আমার মতই যে সত্যএকথা আমি বলিতেছি না, অন্ততঃ এ বিষয়টা বাঙ্গালীর পক্ষে এত গুরুতর, যে এসম্বন্ধে কতকটা আলোচনা চলে। বড়ই দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের ইতিহাস, এমন কি ভাষা ও সাহিত্যের উচ্চ পরীক্ষা দিতে হইলে আমাদিগকে বিলাতে যাইয়া পড়িতে হয় । সাহেবদের লিখিত পুস্তকগুলি তো আমরা বাড়ীতে বসিয়াই পড়িতে পারি, কিন্তু একবার অজন্তা, অমরাবতী, সঁচি, গয়া, ভুবনেশ্বব, হস্তিগুম্ফা, খেজুবাহ প্ৰভৃতি স্থান ঘুরিয়া দেখিবাব ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় করেন না, ইহা বড়ই দুঃখের বিষয়। তাহাতে অল্পসময়ে অনেক কাজ হয়, এবং ভারতীয় ইতিহাস-লক্ষ্মীর সঙ্গে আমাদের মুখোমুখী পরিচয় হইতে পারে। খরচও কম পড়ে । জাবা, প্ৰম্বনম, শ্যাম ও কাম্বোজ প্ৰভৃতি স্থানও প্যারি বা লণ্ডন হইতে অনেক কাছে । সঙ্গীতে যখন সাক্ষাৎ জগদীশ্বর দিল্লীশ্বর আকবব তানসেন প্ৰমুখ সঙ্গীতাচাৰ্য্যগণের দ্বারা রাগ-রাগিণীর বৈজ্ঞানিকভাবে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করাইতেছিলেন, তখন বাঙ্গলা-পল্লীতে সেই সুর পৌছায় নাই। কিন্তু হিন্দুযুগে এদেশে বৈজ্ঞানিক ভাবে সঙ্গীতের চর্চা বিশেষরূপেই হইয়াছিল। লক্ষ্মণ সেনেব সময়ে রাগ-বাগিণী রাজসভায় মূৰ্ত্ত হইত বলিয়া কথিত আছে। যে সময়ে সমুদ্রগুপ্ত বীণা বাজাইতেন, তাহাব সেই সুরলহরী, নারদ ও তুম্বুরু প্ৰভৃতি সঙ্গীত সম্রাটুদিগকেও লজ্জা দিত বলিয়া তাম্রশাসনে উল্লিখিত আছে। এই বীণাতে তিনি এরূপ সুদক্ষ ছিলেন যে, তঁহার মুদ্রায়ও তাহার মূৰ্ত্তি বীণাবাদকরূপে অঙ্কিত হইয়াছিল। লক্ষ্মণ সেনের সভায় জয়দেবেন্ধ হৃদয়াধিষ্ঠাত্রী পদ্মাবতী “গান্ধার’ রাগে গান গাহিয়া কপিলেশ্ববের সভা-জষী সঙ্গীতাচাৰ্য্যকে জয় কবিয়াছিলেন, স্বয়ং জয়দেব বর্তাহার চরণের গতির ক্রম লক্ষ্য করিয়া তান রাখিতেন এবং নিজকে “পদ্মাবতীচরণচারণ-চক্ৰবৰ্ত্তী” বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন। লক্ষ্মণ সেনেব রাজসভার নৰ্ত্তকী শশিকলা এবং বিদ্যুৎ-প্রভার গানে রাগ-রাগিণী এরূপ মূৰ্ত্ত হইয়া উঠিত যে, লোকে তাহা শুনিয়া বেহুস হইয়া যাইত । এক রমণী সেইরূপ অবস্থায় বিদ্যুৎ-প্রভাব মুখে ‘সুৈিহ” রাগের গান শুনিয়া নিজের শিশুকে কলসী মনে করিয়া রাজু বাধিয়া কুপোদকে মামাইয়া দিয়াছিল। সেক শুভোদয়াতে এই ঘটনাটির উল্লেখ দৃষ্ট হয় ( সেক শুভোদয়া, ত্ৰয়োদশ পবিচ্ছেদ, ৬৮-৬৯, পৃঃ ) ৷ জয়দেবের গীতগোবিন্দ সমস্ত ভারতবর্ষে গীত হইত, কিন্তু এই সকল গান সৰ্ব্বদাই গুর্জর, খােখােজ, গান্ধীর প্রভৃতি রাগে গীত হওয়াব নির্দেশ আছে । সম্ভবতঃ গুজরাট, কাম্বোজ, কান্দাহার প্রভৃতি স্থানের নাম হইতে ঐসকল বাগের নাম গৃহীত হইয়াছিল, কিন্তু বঙ্গদেশ চিরকালই গণতান্ত্রিক, এখানকার জনসাধারণ কোন কালেই একটা নির্দিষ্ট কায়দা বা বিধানের বশবৰ্ত্তী হইয়া চলিতে রাজী নহে। জনসাধারণ সঙ্গীত-বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারা শিরোধাৰ্য্য করিয়া