পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&o বৃহৎ বঙ্গ পিঙ্গল মাথার চুল বেকা কাকলী। নাকে মুখে চক্ষুতে লাগিয়াছে কালী ৷” ইহার পর হাজার হাজার কামার একত্ৰ হইয়া “আড়ে সাত গজ,” “নয় গজ দীৰ্যে” এবং “উভে নয়। গজ” লৌহেব ঘরখানি কি ভাবে গড়িয়াছিল, তাহার বিস্তৃত বর্ণনা আছে। বঙ্গে যে সকল কুটিরশিল্পের চর্চা হইত, তাহার কথা পূর্বেই লিখিয়াছি। বাণিজ্যের জন্য বঙ্গের বস্ত্ৰশিল্প জগতের সর্বত্র প্রথম স্থান অধিকার করিয়াছিল। ঢাকার মসলিনের কথা পূর্বেই লিপিবদ্ধ করিয়াছি। বঙ্গদেশের বাণিজ্যশিল্পের মধ্যে “শঙ্খশিল্প” একটি প্রধান, ঢাকা নগরী তাহারও শ্রেষ্ঠ কেন্দ্ৰ । শঙ্খের কারবারটা প্ৰথমতঃ দক্ষিণাত্যেই ছিল। শঙ্খ-শিল্পিগণ তথায় ‘পারওয়া” নামে অভিহিত হইত। দুই হাজাব বৎসব পূর্বের অনেক শাখাবি কাজ তামিল দেশের প্রাচীন রাজধানী কোবকাই এবং কায়েলের ভগ্নস্তুপে আবিষ্কৃত হইয়াছে। যে ভাবে তথায় শঙ্খ কাটা এবং কারুকাৰ্য্যমণ্ডিত হইত, তাহাতে বুঝা যায় এই শিল্পীদের অস্ত্রশস্ত্র ঠিক ঢাকার শাখারীদের ব্যবহৃত হাতিয়াবেবি মতই ছিল। মালিক কাফুর কর্তৃক চতুৰ্দশ শতাব্দীতে টিনিভেলি জেলায় হিন্দু রাজধানীধ্বংসের পাব এই শিল্পিগণ বঙ্গদেশে ঢাকায় আগমন করেন বলিয়া শ্ৰীযুক্ত জে. হোবনেল বঙ্গীয় এসিযাটিক সোসাইটিব জাবন্যালের মেময়রের (memon1 ) ৪১১ পৃষ্ঠায় যে মত অত্যন্ত দ্বিধাব সস্থিত প্ৰকাশ কবিয়াছেন, সেই মত সমীচীন বলিয়া মনে হয় না। এ সম্বন্ধে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নাই। কিন্তু ঢাকার এই শিল্প যে এত আধুনিক তাহা মনে হয় না। হাতেব শাখা বাঙ্গলা গৃহস্থ রমণী বহু পূৰ্ব্ব হইতেই ব্যবহার করিতেন এবং সেই শাখা যে দূরদেশবাসী শিল্পিীরা প্ৰস্তুত করিয়া দিত, এমন মনে হয় না । শিবের প্রাচীন ছড়ায় বাঙ্গালী কবিরা দেবাদিদেবকে শাখারী সাজাইয়া গৌরীর সঙ্গে তাহার দাম্পত্য-কলহের পরিকল্পনা করিয়াছেন। হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় শ্রেণীর লোকেরাই শঙ্খকে অতি পবিত্ৰ সামগ্ৰী বলিয়া মনে করিতেন; বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের সময়ে এতদ্দেশীয় মেয়েরা যে শাখা পরিতেন, তাহা দাক্ষিণাত্য হইতে আমদানী হইত বলিয়া মনে হয় না ; “শঙ্খ কর চুর, বসন করাহ দূৱ—তোড়হ গজমতি হাররে”-বিদ্যাপতির এই কবিতা চতুৰ্দশ শতাব্দীর। পুৱাকালে অবশ্য মহীশূর, বেলেরি, হায়দ্রাবাদ, অনন্তপুর, কর্ণািল, কাথিওয়ার, কৃষ্ণা, গুজরাট প্রভৃতি নানা কেন্দ্ৰে শাখার কাজ হইত। কিন্তু স্মরণাতীত কাল হইতে ঢাকাও এই শিল্পের একটি প্ৰধান কেন্দ্ৰ বলিয়া স্বীকৃত হইয়াছে। ট্যাভারনিয়ার সপ্তদশ শতাব্দীতে লিখিয়াছেন ঢাকা ও পাবনা ( অনুবাদক ভুল করিয়া পাবনাকে পাটনা করিয়াছেন,- এ. সো, মেময়ার, ৪২৫ পৃঃ) এই দুই নগরীতে অনুন ২০০০ শাঁখারী ছিল। বাজলায় ঢাকা, নবদ্বীপ, রঙ্গপুর, দিনাজপুর প্রভৃতি নানাস্থানে শাখার কারবার চলিতেছে। এই ব্যবসায়ীর পূর্বে সকলেই হিন্দু ছিল, কিন্তু এখন দিনাজপুর প্রভৃতি অঞ্চলে মুসলমানেরা এই ব্যবসায়টা প্ৰায় একচেটিয়া করিয়া লইয়াছেন। তথাপি মোটামুটি ধরিলে হিন্দু শিল্পীর সংখ্যাই সমধিক । ঢাকার শাঁখারীবাজারে যে সকল শ্রেষ্ঠ শিল্পী বাস করেন, তাহদের