পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o e বৃহৎ বঙ্গ বাঙ্গলার কতকগুলি ধৰ্ম্মকাব্য প্ৰাক-সংস্কৃত সাহিত্যের অন্তৰ্গত, যথা-মনসামঙ্গল, শিবায়ন ও ধৰ্ম্মমঙ্গল কাব্য এবং কৃষ্ণ-ধামালী। ইহাদের পত্তন দেওয়া হইয়াছিল প্ৰাক-সংস্কৃত যুগে। ধৰ্ম্মমঙ্গল কাব্যে মহারাজ ধৰ্ম্মপালের শুষ্ঠালিকা রঞ্জাবতীর পুত্ৰ মেদিনীপুরের ময়না গড়ের রাজা কর্ণসেনের পুত্র লাউসেন কর্তৃক কামরূপ (কঁাউর) ও ‘অজেয়ঢেকুর” বিজয় বর্ণিত হইয়াছে। ইহা ছাড়া লাউসেনের মাতুল মহামদের ( মাহুস্তাব ) ষড়যন্ত্র ইত্যাদি বিষয় বর্ণিত আছে। পাল-রাজাদের সময়ের এদেশের লোকোব আদর্শ ও রাজভক্তি যে কত বড় ছিল, তাহার বহু আভাস এই কাব্যে দৃষ্ট হয়। হিন্দু রমণীর তপোবল রঞ্জাবতীর চরিত্রে উজ্জল ভাবে আঁকা হইয়াছে। কালু ডোমের আশ্চৰ্য্য বীরত্ব ও প্ৰতিশ্রুতি রক্ষা করিবার জন্য ভ্ৰক্ষেপহীন ভাবে জীবনত্যাগ এবং বৌদ্ধ জগতের কতকগুলি গুণকে খুব রং ফলাইয়া দেখান হইয়াছে। লক্ষ্ম্যার চরিত্রে অসামান্য রাজভক্তি, স্বামিপুত্ৰকে মৃত্যুর মুখে ঠেলিয়া দিয়াও যে রাজভক্তি বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় নাই, এদেশের অধস্তন স্তরের লোকেদের উন্নত নৈতিক আদর্শ প্রতিপন্ন করিতেছে। রাজদ্বাবে সাক্ষ্য দেওয়াব বিভীষিকা হবিহর বাইতির চরিত্রে এবং হিন্দুললনার ধৰ্ম্মভীরুতা তাহার স্ত্রীর চব্বিত্রে দৃষ্ট হইতেছে। ধৰ্ম্মমঙ্গলের আদিলেখক ময়ূরভট্টের রচনা এখনও সমস্তটা পাওয়া যায় নাই ; কিন্তু পরবর্তী কবি মাণিক গাঙ্গুলী, রূপরাম, ঘনবাম ও সীতারাম প্ৰভৃতি কয়েক জনের কাব্য আমরা পাইয়াছি । এই সকল কবি ব্যতীত আরও বহু কবি ধৰ্ম্মমঙ্গল রচনা কবিয়াছেন। পববত্তী কবিরা ব্ৰাহ্মণ্যের আদর্শেব সঙ্গে বৌদ্ধ আদশ মিশাইয়া কাব্যগুলির গৌরবের হানি করিযাছেন । এত বড বীর লাউসেনকে ভক্তের পর্ভুক্তিতে ফেলিয়া র্তাহাকে দিয ধ্রুব-প্ৰহলাদেব অভিনয় কাবাইতে যাইয়া--তাহার শৌৰ্য্যবীৰ্য্য সমস্তই মাটী করিয়া ফেলিয়াছেন। তথাপি প্ৰত্যেক খানি ধৰ্ম্মমঙ্গলে হিন্দুরাজত্বের কিছু-না-কিছু উপকরণ আছে, তাহ অতীব মূল্যবান ; অনেক ভৌগোলিক ও প্রাচীন সমাজের তত্ত্ব এই পুস্তকগুলিতে পাওয়া যায়, শৈললিপি ও তাম্রশাসনগুলির সঙ্গে ধৰ্ম্মমঙ্গল কাব্যগুলি মিলাইয়া পড়িলে বঙ্গের ইতিহাস-সন্ধানী পাঠক অনেক তত্ত্ব আবিষ্কার করিতে পরিবেন। এখনও বহু কবির রচিত ধৰ্ম্ম-মঙ্গল বঙ্গের পল্লীতে পডিয়া রহিয়াছে, কে তাহদের খোজ করে ? এখনও অজেয়ঢেকুবে ইছাই ঘোষের শ্যামরূপার মন্দির, কর্ণগড়ে লাউসেনের ভগ্ন বাজপ্ৰাসাদ সেই প্ৰাচীন রাজগণের কীৰ্ত্তি-কথা ঘোষণা করিতেছে । যে হরিপাল রাজার কন্যা ক্যানেড়ার সঙ্গে লাউসেন যুদ্ধ করিয়াছিলেন, তঁাহার নামাঙ্কিত হরিপাল-নগরী এখনও বিদ্যমান এবং তঁহার বিশাল পুরীর বাহিরেক দিকটা এখনও ‘বাহিরখণ্ড’ বলিয়া পরিচিত। ইছাই ঘোষ তামশাসনের ঈশ্বব ঘোষ কিনা ইহা লইয়া পণ্ডিতগণের মধ্যে বিতর্ক চলিতেছে এবং প্রাচীন রাজা পাইলে তঁহাকে স্বশ্রেণীতে টানিয়া আনিয়া স্বজাতির গৌরব বৃদ্ধির জন্য কেহবা তাহাকে কায়স্থ, কেহ বা সাদগোপ, কেহ বা গয়লা করিবার চেষ্টায় আছেন । প্ৰাচীন বঙ্গলা পঞ্জিকাগুলিতে কলিযুগের রাজচক্ৰবৰ্ত্তিগণের মধ্যে লাউসেন, মহীপাল প্রভৃতির নাম ছিল । আধুনিক পঞ্জিকাগুলি অনাবশ্যক মনে করিয়া লাউসেনের নামটি তুলিয়া ফেলিয়াছে! মাণিক গাঙ্গুলীর काळ-कां ।