পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Э o о No2 বৃহৎ বঙ্গ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে বহু ধৰ্ম্ম-সংগীত রচিত হয়। এখানে তাহার উল্লেখের অবকাশ নাই । যাত্রাওয়ালাদের মধ্যে কৃষ্ণকমল গোস্বামীর স্বপ্নবিলাস ও রাই-উন্মাদিনী ( দিব্যোন্মাদ ) এই দুইটি অমর কীৰ্ত্তি । কৃষ্ণকমলের জন্মস্থান নদীয়া জেলার ভাজন ঘাট গ্রামে এবং কৰ্ম্মস্থল ঢাকায় । তিনি ১৮১০ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরিণত বয়সে ১৮৮৮ খৃষ্টাব্দে গঙ্গাতীরে প্রাণত্যাগ করেন। সমস্ত চৈতন্যচরিতামৃতখিনি এবং পদাবলী-সাহিত্যের রস নিঙড়াইয়া কবি র্তাহার এই দুই গ্ৰন্থ রচনা করেন, বিশেষ রাই-উন্মাদিনী। এই পুস্তকে রাধার নামে চৈতন্তের প্ৰেমমূৰ্ত্তি দেখান হইয়াছে। যিনি চৈতন্যের সম্বন্ধে অবিদিত-ৰ্তাহার এই অপূৰ্ব্ব কাব্যেব স্বাদগ্রহণের সুবিধা হইবে না । কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কৃষ্ণকমল-রচিত বিচিত্র বিলাসের ২০,০০০ পুস্তক বিক্রীত হইয়াছিল। ঢাকাব উপর দিয়া বড় বড় বন্যা ও টর্ণেডোর প্রবাহ চলিয়া গিয়াছে, কিন্তু রাই-উন্মাদিনী যে অশ্রুর বন্যার সৃষ্টি করিয়াছিলতাহার তুলনা নাই। উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে পূর্ববঙ্গ এই অপূর্ব উন্মাদনার বন্যায় ভাসিয়া গিয়াছিল । চৈতন্য যে কত সত্য, তাহার প্রেমের কথা যে কত মৰ্ম্মান্তিক এবং তিনি যে বাঙ্গালী হৃদয়ের কত আপনার জন, তাহা এই দিব্যোন্মাদ যাত্রা শুনিয়া লক্ষ লক্ষ শ্ৰোতা বুঝিয়াছিল এবং এই লক্ষ লক্ষ লোক উক্ত গীতিনাট্যের প্রত্যেকটি গান জপমালা করিয়া রাখিয়াছিল। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে কবিওয়ালাদের মধ্যে হরুঠাকুর ও রামবসু বঙ্গের বহুজনসমাদৃত কবি। প্রাচীন কালে যে কৃষ্ণ-ধামালী নামক কবিতা বঙ্গদেশের পল্লীতে পল্লীতে গীত হইত—সেই ধামালীর সমস্ত আবৰ্জনা ঘুচিয়া গিয়াছিল এবং উহা চৈতন্য-প্রেমের পূত-সলিলে অবগাহনপূর্বক শুদ্ধস্নাত অবস্থায় নিয়শ্রেণীর মধ্যে প্ৰায় ৪০০ বৎসর যাবৎ নিৰ্ম্মল ও শ্ৰীসম্পন্ন হইয়াছিল । তাহার ফলে কবিওয়ালাদের গানগুলি শুধু শ্রুতিমধুর নহে, সহজ সুন্দর শব্দ-সম্পদ-সম্পন্ন এবং নিৰ্ম্মলভাব-দ্যোতক হইয়াছিল । শিবসংগীত ও কৃষ্ণ-ধামালীর দুই ধারা কবির গানে নবজীবন ধারণ করিয়াছিল। ঐ দুই শ্রেণীর গানও খুব নিম্নশ্রেণীর মধ্যে গীত হইত। কবিওয়ালারাও প্রায়ই নিয়শ্রেণীর লোক-ইহাদের মধ্যে মুচি, ডোম প্ৰভৃতি জাতীয় কবিও ছিল। রামবসুর এই গানটি অতি-পরিচিত, “মনে রহিল সই মনের বেদনা, তারে বলি বলি বলি বলা হ’ল না, সরমে মরমের কথা কওয়া গেল না। যদি নারী হয়ে সাধিতাম তাকে, তবে নির্লজ্জা রমণী ব’লে হাসিত লোকে । সখি বলব। সে বিধাতাকে, নারী জনম যেন আর হয় না । যখন হাসি হাসি সে আসি বলে, সে হাসি দেখি ভাসি নয়ন জলে । তার মুখ দেখি মুখ ঢাকি কাদিলাম সজনি । অনায়াসে প্রবাসে গেল সে গুণমণি ৷” শেষের কযেকটি ছত্ৰেব কৰুণ সুর দরদীর প্রাণে দাগ দিয়া যায । বিদায়কালেও তার হাসি। কি নিষ্ঠুর, সে হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল, যাইবার সময়ও তাহার চোখে মুখে একটু দুঃখের ছায়া পড়িল না, বরং হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল। শেষ ছত্রের কৃষ্ণকমল গোস্বামী । कदि७म्नछ ।