পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণচন্দ্র ও তৎপরবর্তী যুগে বাঙ্গলা-সাহিত্যের অবস্থা Yoo “অনায়াসে” শব্দটি বড় করুণ। সে “অনায়াসে” চলিয়া গেল, একটুও কষ্ট হইল না। সলজ্জা বধু তার হাসিমুখ দেখিয়া চোখের জল সামলাইতে পারিলেন না-আঁচল দিয়া মুখ ঢাকিয়া সে অশ্রু মুছিয়া ফেলিলেন পাছে নিষ্ঠুর সে, তঁহার সেই অশ্রু দেখে । এই গানটি “বঙ্গের সেই বুকভরা মধু” পল্লীবধুর সলজ্জ মধুর মূৰ্ত্তির একখানি দুপ্ৰাপ্য ছবি, এই ছবি কি আর দেখিতে পাইব ? সেই যে “বলি বলি বলি বলা হ’ল না। সরমে মরমের কথা কওয়া গেল না”—ফুটবার মুখে কুঁড়িটির মত নুতন অনুরাগে ভরা হৃদয়ট-এখনও যাহার সুগন্ধ বাতাস বিলাইতে পারে নাই, কোমল দলগুলি তাহা আঁকড়াইয়া ধরিয়া রাখিয়াছে, এখনও ছাড়িয়া দেয় নাই। সেই স্বৰ্গীয় রূপ কি আর দেখিতে পাইব ? নারী-স্বাধীনতার এই যুগে কি পল্লীবাসিনীর লাজময়ী মূৰ্ত্তির গৌরব আর থাকিবে ? বাঙ্গলার কবিগণের শ্রেষ্ঠ দান-আগমনী গান। তখন কৌলীন্যের মৰ্য্যাদা অত্যধিক হইয়াছিল। পুত্রকন্যার বিবাহে লোকে শুধু কুল খুজিত। এখন যেরূপ বি এ, এম. এ. পাসকরা ছেলের চাহিদা খুব বেশী, সেকালে কুলীনের ছেলেমেয়ের মৰ্য্যাদা অত্যন্ত অধিক ছিল ; কুলীনের ঘরে জন্ম হইলে কাণ, খোড়া-কন্দৰ্পের দরে বিকাইত। কবি ঈশ্বর গুপ্ত নিজে খুব সুশ্ৰী ছিলেন, কিন্তু নিতান্ত কুৎসিত ও অঙ্গহীন-দোষযুক্ত একটি কন্যাকে বিবাহ করিয়াছিলেন। তঁহার পিতা কুলকাৰ্য্য করিয়া এইরূপ এক শয্যাসঙ্গিনীকে পুত্রের ঘাড়ে চাপাইয়া দিয়াছিলেন। আমার কোন আত্মীয় অতিশয় ধনাঢ্য ও সম্রান্ত ছিলেন, তিনি তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্ৰকে তোতলা এবং কুরূপা মহিলার সঙ্গে বিবাহ দিয়াছিলেন, কুলের গৌরব তখনকার দিনে সর্বগৌরবের উপর ছিল। এই সকল বিবাহের ফলে অনেক সময়ে বিসদৃশ ঘটনা ঘটত। অনেকেই জানেন ঈশ্বর গুপ্ত এই পরিণয়ের ফলে স্ত্রীজাতিবিদ্বেষী হইয়াছিলেন। আমার সেই আত্মীয়ের পুত্র তরুণ সুৰ্য্যের ন্যায় প্ৰতিভাসম্পন্ন ছিলেন, বিবাহের অল্প পরেই তিনি পাগল হইয়া গেলেন। কুলীনের অর্থের গৌরব চাহিতেন না, তঁাহারা সাধারণতঃ চিরদরিদ্র থাকিতেন, কেবল কুলের বড়াই করিয়া অনেক সময়ে বিদ্যাচর্চায়ও বিরত হইতেন, তঁহাদের পক্ষে প্ৰত্যেকের শতাধিক বিবাহ তো নিত্যকার কথা ছিল । এদিকে অষ্টমবর্ষে গৌরী সাজাইবার চেষ্টায় ধনী ব্যক্তিরা মুৰ্থ, একান্ত দরিদ্র ও নেশাখের বৃদ্ধের হস্তে তঁহাদের অপোগণ্ড বালিকাদিগকে সমৰ্পণ করিয়া সামাজিক প্ৰশংসা “মৰ্জন করিতেন। সমাজের যখন এই অবস্থা-তখন এই বিসদৃশ ও অস্বাভাবিক ব্যাপায়ের যাহা কিছু অশুভ ও কষ্ট তাহা ভোগ করিতে হইত—সেই বালিকা কন্যাকে ও তাহার মাতাকে। আমরা পূর্বে অনেকবার বলিয়াছি যে বাঙ্গলার লোকে হিন্দুধৰ্ম্মকে ব্যাবহারিক জীবন হইতে পৃথক করিয়া দেখেন নাইপোষাকী ধৰ্ম্ম লইয়া বাঙ্গালী কখনই তৃপ্ত হন নাই। ঘরের কথার মধ্যে র্তাহারা স্বর্গের কথা আবিষ্কার করিতেন, মন্দিরের ঠাকুর যতদিন তঁহাদের অন্তরের ঠাকুর না হইতে পারিতেন, ততদিন তাহারা ঠাকুরের উপাসনা করিয়া সন্তুষ্ট হইতেন না। বাঙ্গলার আগমনী গানে বাঙ্গলার জননী ও কন্যার হৃদয়ের নিভৃত বাৎসল্যর প্রবাহ ፵¶ፏ ▼s€ ፕ