পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-প্ৰাগজ্যোতিষপুর SeVo ভীষণ আঘাতে নারায়ণ নামক শিষ্যের একখানি হাত ভাঙ্গিয়া গেল, শেষে অসহ পীড়ন সহ করিয়া ইহারা দেবীর নিকট মস্তক অবনত করিলেন; কিন্তু শঙ্করদেব-সম্বন্ধে কোন প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। রাত্রে ইহাদের দেহ হইতে লৌহশূঙ্খল খসিয়া পড়িল, তখন ইহারা রক্ষী দিগকে পুনরায় তঁহাদিগকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করিতে অনুরোধ করিলেন । এই আশ্চৰ্য্য সত্যতা দেখিয়া প্রহরীরা স্তম্ভিত হইয়া ক্ষমা চাহিল। শঙ্কর লুকাইয়া কতদিন থাকিবেন ? তিনি নরনারায়ণের ভ্ৰাতা চিলা রায়ের নিকট আত্মসমৰ্পণ করিলেন । চিলা রায়ের চেষ্টায় শঙ্কর নরনারায়ণের সাক্ষাৎকার লাভ করিলেন। শঙ্করের সৌম্য মূৰ্ত্তি, সরস্বতীর বীণার মত সুস্বর, এবং চরিত্রের মৰ্য্যাদা-পূর্ণ গাম্ভীৰ্য্য রাজাকে মোহিত করিল। তিনি ব্ৰাহ্মণদিগকে সভায় ডাকাইয়া আনিয়া বিচার করিতে আদেশ করিলেন। শঙ্করের নিকট ব্ৰাহ্মণের পরাজয় স্বীকার করিলেন, কিন্তু তঁহার এমনই বিনয় ছিল যে, ব্ৰাহ্মণের ক্রোধাপ্রকাশের কোন সুবিধা পাইলেন না । গেট সাহেব দুইটি প্রবাদের উল্লেখ করিয়াছেন। একটিতে কথিত আছে, রাজা নরনারায়ণ শঙ্করের ভগিনীর পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন, কিন্তু বোধ হয়। দ্বিতীয়টিই সত্য, রাজা নরনারায়ণ নহেন, চিলা রায় তঁাহার ভগিনীপতি হইয়াছিলেন। রাজা স্বয়ং শঙ্করের নিকট দীক্ষা গ্ৰহণ করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন, কিন্তু শঙ্করের হঠাৎ মৃত্যু হওয়াতে তাহা হইতে পারে নাই। রাজা শঙ্করকে পাড়াবাউসী এবং তৎসন্নিহিত স্থানগুলির শাসনকর্তৃত্ব দিয়াছিলেন, কিছুকাল এই কাজ করিয়া শঙ্কর দেখিলেন, তাহার ধৰ্ম্ম-প্রচারকার্য্যের ব্যাঘাত হইতেছে, তিনি বৈষয়িক হইয়া পড়িতেছেন; তখন সেই কাজে ইস্তফা দিয়া তিনি কোচবিহারে আসিয়া বাস করেন, এই সময়ে তঁাহার বহু শিষ্য হইয়াছিল, তঁহাদের মধ্যে মথুৰাদাস আতা ( বরপেটা-নিবাসী), মধুপুরের বিষ্ণু আতা, কমলাবাড়ীর বন্দুয়া আতা, কেশব আত্মা ( ভাটৌকুচি-নিবাসী), চামারিয়ার বিষ্ণু আতা, জৈনিয়ার নারায়ণ দেব ঠাকুর, দালগোমার রামচরণ ঠাকুর, যড়হেরামদার পরিমা মাধব এবং স্থাজোর-বাসী লক্ষ্মীকান্ত আতা—এই কযেকজনকে তিনি সত্ৰেশ্বর করিয়াছিলেন। মাধব পুরুষোত্তম-সম্প্রদায়ের এবং দামোদর আর এক সম্প্রদায়ের নেতা হইয়াছিলেন। দামোদর ব্ৰাহ্মণ ছিলেন, এইজন্য বহু ব্ৰাহ্মণ এই দলে ভিড়িয়াছিলেন । আসামী লেখকগণের মধ্যে কন্থাভূষণ দৈত্যারী এবং রামরায়ই শঙ্কর দেবের জীবনীকারদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্ৰসিদ্ধ, ইহার এবং অপরাপর কয়েকজন তাঁদেশীয় লেখক উল্লেখ করিয়াছেন যে শঙ্করদেব চৈতন্যদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন। একখানি প্রাচীন আসামী হাতের লেখা পুথিতে অঙ্কিত চিত্রে চৈতন্য ও শঙ্কর উভয়কেই উপবিষ্ট দৃষ্ট হয়, চৈতন্যদেব উপদেশ দিতেছেন এবং শঙ্কর তাহা সম্রামের সহিত শুনিতেছেন। শঙ্কর চৈতন্য হইতে বয়সে বড় ছিলেন এবং উভয়েই সমসাময়িক ও অতি নিকটবৰ্ত্তী দেশবাসী-উভয়েই বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের নেতা। এরূপ অবস্থায় উভয়ের এই মিলন-কথা যখন এতগুলি আসামীয় পুথিতে বর্ণিত আছে, তখন দুইজনের দেখাসাক্ষাতের কথাটা উড়াইয়া দেওয়া যায় না। কিন্তু শঙ্কর বৈধী৷ ভক্তি এবং জ্ঞানমার্গের দিকে বেশী জোর দিয়াছিলেন, চৈতন্যদেবের প্রেমের গতি “রাগানুগা'-উভয়ের দুই স্বতন্ত্র পন্থা। শঙ্কর নৈতিক উপদেশের মুক্তাবলী ছড়াইয়া গিয়াছেন,