পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

yo-3 বৃহৎ বঙ্গ শিবলিঙ্গ, পঞ্চখণ্ডের “বাসুদেব” প্ৰভৃতি প্ৰাচীন দেবতা শ্ৰীহট্ট জেলায় বিশেষ প্ৰসিদ্ধ। ইহাদের কোন কোন দেবতার অদ্ভুত অজানিত মূৰ্ত্তি ; শুধুই শিলাখণ্ড রূপী শিব-দর্শনে মনে হয়, শ্ৰীহট্ট অতি প্ৰাচীন কালে আৰ্য্যগণের আধুষিত ও পুৰ্ব্বভারতের অতি বিশিষ্ট স্থান ছিল, কারণ যেখানে শিব লিঙ্গও নহেন, বিগ্রহও নহেন,-শুধু দীর্ঘাকৃতি শৈল-খণ্ড,-তাহা অতি পুরাতন যুগের। পূৰ্ব্বভারতের বৈশিষ্ট্য, শৈবধৰ্ম্মের প্রাধান্ত-তাহা যেমন তাম্রপটে, তেমনই এদেশের তীর্থগুলিতেও পরিদৃষ্ট হয়। শৈৰ ও শাক্ত তীর্থই এখানকার প্রাচীনতম । ত্রিপুরা ও কামরূপের রাজারাই অনেক সময় এই দেশ শাসন করিয়াছেন, কিন্তু প্ৰাচীন কালের আর একটি রাজবংশের পরিচয় আমরা পাইয়াছি। দুইখানি তাম্রফলক আবিষ্কৃত হইয়াছে ; এই দুইখানিই শ্ৰীহট্টের নিকটবৰ্ত্তী ভাটেরা গ্রামের “হোমের টিম্ব” নামক এক ক্ষুদ্র শৈল হইতে উদ্ধার করা হইয়াছে । ইহাদের মধ্যে যে তারিখ দেওয়া আছে, তাহার কতকটা কালক্রমে বিকৃত ও রূপান্তরিত হইযা যাওযাতে—ঐ দানপত্র-দ্বয়ের সময় সম্বন্ধে গোলযোগ উপস্থিত হইয়াছে। রাজা রাজেন্দ্ৰলাল মিত্ৰ অনুমান করিয়াছিলেন, প্ৰথমখানির তারিখ ১২৪৫ খৃঃ অব্দ। এদিকে পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ ও অচ্যুতচরণ চৌধুরী ইহাব সময় বহু পূৰ্ববৰ্ত্তী মনে করেন। এমন কি অচ্যুতবাবু ঐ তামফলকখানি খৃষ্ট জন্মিবার পূর্বের বলিয়া ইঙ্গিত করিয়াছেন। আমার মনে হয় উভয় পক্ষের মতেই একটু অতিরিক্ত মাত্রায় অনবধানতা আছে । বাজেন্দ্রলাল মিত্ৰ “কেশব দেব গোবিন্দেব ন্যায” এই লেখাটা দেখিয়া উক্ত রাজাকে সাহজালাল কর্তৃক পরাজিত রাজা গৌড়গোবিন্দের সহিত অভিন্ন মনে করিয়াছেন,- “গোবিন্দের ন্যায়” বলিলেই গোবিন্দ হয় না। বিশেষ সাহজালাল জয়ী হওয়ার পর হিন্দুরাজ্য বিনষ্ট হয়, দেশ মুসলমানদের করতলগত হয়। তাহা হইলে কেশব দেবেব পর ঈশানদেব আবার সাৰ্ব্বভৌম রাজা হইবেন কিরূপে ? এইরূপ বহু বিসদৃশ কথা মিত্ৰ মহাশয়ের মন্তব্য হইতে বাহির করা যায়। কিন্তু তদ্বিরুদ্ধে প্ৰধান প্ৰমাণ এই যে তাম্রপটের লিপি। কখনই ত্ৰয়োদশ শতাব্দীর নহে, স্পষ্টই তাহার পূর্ববৰ্ত্তী। অপর দিকে অচ্যুতবাবু যে ঐ লিপি খৃষ্টীয় অব্দের পূর্ববৰ্ত্তী মনে করেন, তাহা একবারে অগ্ৰাহ। মৌৰ্য্য, গুপ্ত, পাল প্ৰভৃতি যুগের বহুলিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে কামরূপের ভাস্করবম্মা হইতে বনমাল ও তৎপরবত্তী ধৰ্ম্মপালের লিপিও পণ্ডিতগণের সম্যক অধিগম্য। এই সকল লিপির সঙ্গে তুলনা করিলে কেশব-তাম্রপটের লিপি নবম কি দশম শতাব্দীর বলিয়া মনে হয়। এই লিপি অনেকটা হৰ্জরবর্শ এবং বনমালের লিপির ন্যয় ( মূল লিপি। ১৮৮০ আগষ্ট মাসের এসিয়াটিক সোসাইটির জারনালে দ্রষ্টব্য )। কেশব দেবের সুদৃঢ় প্রস্তরনিৰ্ম্মিত বিষ্ণুমন্দির কোথায় গেল ? সুতরাং তাহা বহু বহু প্ৰাচীন এবং কালে লুপ্ত হইয়া গিয়াছে, অচ্যুতবাবুর এই যুক্তির উত্তর অতি সহজ। আৰ্য্যাবর্তের যত কিছু পাষাণ ও লৌহ নিৰ্ম্মিত কীৰ্ত্তিস্তম্ভ ও মন্দির, তাহার প্রায় সমস্তই গত সহস্ৰ বৎসরের রাষ্ট্র-বিপ্লবে অধিকাংশ স্থলেই নিশ্চিহ্ন হইয়া অন্তহিত হইয়াছে, তাহার উপর কালের হাত অবশ্য কিছু আছে। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের প্ৰাচীন ইতিহাস ।