পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-শ্ৰীহট্ট Seye রাজার রাজ্য কাড়িয়া লইয়া কি তঁহার পরিবার ও স্বগণবর্গের এই দুৰ্গতি করিয়াছিলেন ? যাহা হউক, আঁধারে আর বেশী ঢ়িল ছুড়িলেও লক্ষ্য ভেদ হইবার কোন সম্ভাবনা নাই। বল্লাল সেনের কৌলিন্যের র্যাহারা প্ৰতিবাদী ছিলেন এবং “পদ্মিনী’ সংক্রান্ত ব্যাপারে যাহারা বিরক্ত হইয়াছিলেন, এমন বহু ব্ৰাহ্মণাদি বর্ণের লোক বঙ্গদেশ হইতে পলাইয়া সীমান্তপ্রদেশে আশ্রয় লইয়াছিলেন। শ্ৰীহট্টে বহুদিন পৰ্য্যন্ত হিন্দুরাজাদের আধিপত্য ছিল, এজন্য এই নিরাপদ আশ্রয়ে বহু সন্ত্রান্ত পরিবার শ্ৰীহট্ট-বাসী হইয়াছিলেন। চতুর্দশ শতাব্দীর শেষভাগে শ্ৰীহট্ট মুসলমানদের অধিকৃত হয়—তখন বঙ্গদেশে মুসলমান প্রভাব সুপ্ৰতিষ্ঠিত ;- এজন্য আমরা দেখিতে পাই, দেশের অনেক বিখ্যাত পণ্ডিত শ্ৰীহেট্টর অধিবাসী। তখনও শ্ৰীহট্ট বহিঃশত্রুর হস্ত হইতে সুরক্ষিত। ইহার পরে শ্ৰীহট্টে রাষ্ট্রবিপ্লব ও দুৰ্ভিক্ষ উপস্থিত হইয়াছিল, তাহার উল্লেখ আমরা জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গলে দেখিতে পাই । * এদিকে নবদ্বীপ ও শান্তিপুরের টােল তখন খুব জাকিয়া উঠিয়াছে। দলে দলে শ্ৰীহট্টের ব্ৰাহ্মণগণ দেশত্যাগী হইয়া নবদ্বীপ ও শান্তিপুরে উপনিবিষ্ট হইলেন। তাহারা হিন্দু-নৃপতিগণের উৎসাহে সংস্কৃত শাস্ত্ৰে ইতিপূৰ্বেই বিশেষ বুৎপত্তিলাভ করিয়াছিলেন, সুতরাং সহজেই নবদ্বীপের টােলে প্রাধান্য স্থাপন করিতে পারিয়াছিলেন। পাণ্ডিত্যের খ্যাতিতে রঘুনাথ শিরোমণি ও অদ্বৈত আচাৰ্য্যের নাম নবদ্বীপের ব্ৰাহ্মণ-মণ্ডলীর পুরোভাগে। শ্ৰীহট্ট প্রভৃতি হিন্দুরাজগণ-শাসিত দেশে সংস্কৃতের চর্চা এত বেশী হইয়াছিল যে দলিলপত্রের ভাষায় অপেক্ষাকৃত আধুনিক সময়েও বহু সংস্কৃত শব্দের সংমিশ্রণ ছিল । আরাঞ্জেবের শাসনকালে, বঙ্গের সুবেদার সায়েস্তা খার সময় এবং শ্ৰীহট্টের ফৌজদার আবদুল বহেম খাঁর সরকারে নিম্নলিখিত দলিলখানি সম্পাদিত হইয়াছিল। ইহা ২৪৭ বৎসর পূর্বে লিখিত, সুতরাং সে সময়েও যে আদালতে সংস্কৃত ভাষার প্ৰাধান্য ছিল, তাহ প্ৰমাণিত হইতেছে। দলিল-“শ্ৰীনকাল পাট্টা আজকরার মাহে ২৫ আষাঢ় সন। ১০৯২ সােল স্বস্তি দ্বিনবতুত্তরসহস্রতমাব্দে আষাঢ়স্য পঞ্চবিংশতিদিবসে শ্ৰীশ্ৰীমতাং সুলতান আরঙ্গ সাহ পাদপদ্মনামভ্যদায়িনি রাজ্যে বঙ্গানামধীশ্বরেষু শ্ৰীযুক্ত সাহইস্ত খান মহােগ্ৰপ্ৰতাপেষু শ্ৰীহট্টাধিকারিণী শ্ৰীযুত আবদুল রহেম খান মহাশয় শ্ৰীযুক্ত হাজি সাহারাজকন্য পঞ্চখণ্ডাধিকারিত্বে বিলাসিত সাহস্রিয়, পঞ্চখণ্ড চত্তরকান্তৰ্গত খাসাপাটকস্থ শ্ৰীসুদাম দাস শ্ৰীগোবিন্দ দাস শকাসাৎ সপ্ত মুদ্ৰাং গৃহীত্ব শ্ৰীমধুসুদন পাল শ্ৰীকৃষ্ণবল্লভ পাল্যাভ্যাং দক্ষিণে শ্ৰীবৎসিকায়ার্বাটিকা পশ্চিমে পূৰ্ব্বে-রাজমাৰ্গ চ উত্তরে পৃষ্করণ্যত্তরপারিং পূর্বে ঈশান কোণাবধিক প্রমাণেন গোলক আর ফলাইর বাড়ীর গোলে চ জুরিয়ার ত্ৰিসীমা ইথুং চতুঃ সীমাবচ্ছিনা। শ্ৰীমনিপত্তন বাটিকা মৌজে খেসরা সম্বন্ধিনী বিক্রনীতেতি তন্মুল্যং ৭ শত তাঙ্ক দ্রব্য একবাড়ী চতুঃ সীমান সন-তারিখ-সদর।” (শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত, ২য় ভাগ, ৪র্থ অঃ, পৃঃ ৯২) আমরা কোচবিহারের রাজা প্ৰাণনারায়ণের প্রসঙ্গে দেখাইয়াছি

  • শ্ৰীহট্ট দেশে অনাচার দুৰ্ভিক্ষ জগিল। ডাকাচুরি অনাবৃষ্টি মড়ক পড়িল। উচ্ছন্ন হইল দেশ অরিষ্ট দেখিয়া। নানা দেশে সর্ব লোক গেল পলাইয়া৷” চৈতন্ত-মঙ্গল, জয়ানন্দ।