পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S OSo বৃহৎ বঙ্গ ও তাহার অনুচর-বর্গের আজানের শব্দে ভাঙ্গিয়া পড়িল। কেশব দেবের যে বিখ্যাত মন্দি । কথা আমবা তাম্রপটে উল্লিখিত দেখিতে পাই, এই মন্দির কি তাঁহাই ? যদি তাহাই হয়, তবে তাহা কোথায় গেল বলিয়া কাহারো আঁধারে হাতড়াইবার কোন প্রয়োজন নাই। গৌড়-গোবিন্দ স্বয়ং অনেক কেরামৎ জানিতেন, কিন্তু সাহ জালালের নিকট কোনটিই টিকিল না। এইভাবে বিনা যুদ্ধে যেরূপ ত্ৰয়োদশ শতাব্দীর প্রথমে লক্ষ্মণসেনের নবদ্বীপ অধিকৃত শ্ৰীহট্টের স্বাধীনতা-লোপ হইয়াছিল, চতুৰ্দশ শতাব্দীর শেষভাগে সেইরূপ বিনা রক্ত-পাতে »OYO : I * শ্ৰীহট্ট অধিকৃত হইল। হাণ্টার সাহেব বলেন, ১৩৮৪ খৃষ্টাব্দে শ্ৰীহট্ট সাহ জালাল কর্তৃক বিজিত হইয়াছিল ; সাহ জালালের সঙ্গে সুপ্রিসিদ্ধ পীর নেজামুদিনের সাক্ষাৎ হইয়াছিল, নেজামুদ্দিন তাহাকে দুইটি পায়রা উপহার দেন। সাহ জালাল তাহাদিগকে শ্ৰীহট্টে লইয়া আসেন, সেই পায়রার বংশধরেরা “জালালী পায়রা’ নামে পরিচিত, ইহারা অবধ্য । সাহ জালালের প্রভাবে মুসলমান ধৰ্ম্ম শ্ৰীহট্ট খুব বিস্তার পাইয়াছিল। হিন্দু-মুসলমান সকলেই তঁহাকে ভক্তি করিত। তঁহার চরিত্র নিষ্কলঙ্ক ছিল, তিনি স্ত্রীলোকের মুখ দর্শন করিতেন না, চাদর দিয়া মুখ ঢাকিয়া পথে চলিতেন। র্তাহার দরগায় হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই সিন্নি দিয়া থাকেন। ঐ দরগায় কয়েকটি শিলা-লেখ Veg; একটিতে লিখিত আছে, সামসুদ্দীন ইউসফের সময়ে (১৪৭৪১৪৮১ ) উহা নিৰ্ম্মিত, পরবর্তী বাদাসাহেরা উহার সংস্কার ও উন্নতি করিয়াছিলেন । একটিতে ৯১১ হিজরী ( ১৫০১ খৃঃ), আর একটিতে ১০৮৮ হিজরীর ( ১৬৭১ খৃঃ ) অঙ্ক আছে। ঐ দরগাতে সাহ জালাল আনীত একটি উট পাখীর ডিম, তাহার “জুল ফুকার” নামক তরবারি, মৃগাচৰ্ম্মের আসন ( মোসল্লা) এবং কাষ্ঠ পাদুকা আছে। তদীয় দুইটী তামার পেয়ালাও তথায় রক্ষিত আছে, উহাদের উপরে আরবী শ্লোক উৎকীর্ণ। ঐ দরগায় আরাঞ্জেব একটি ডেগা উপহার দিয়াছিলেন,-উহা তাম্রনিৰ্ম্মিত, উহাতে ১০১২ মণ চাউলের ভাত রান্না হইতে পারে। তাহার উপর যে লিপি উৎকীর্ণ আছে, তাহ ১৯১৫ হিজরীর ( ১৭০৭ খৃ: ) অঙ্ক বহন করে। সাহ জালালের সঙ্গে ৩৬০ জন আউলিয়া আসিয়াছিলেন। শ্ৰীহট্টবাসীরা কখনও কখনও তাঁহাদের দেশকে “তিনশ ষাটে আউলিয়ার মুলুক” বলিয়া থাকেন। “শ্ৰীহট্টে সাহ জালাল”, “আনোয়ার আলিয়া” এবং “শ্ৰীহট্ট নূর” প্রভৃতি পুস্তকে এই আউলিয়াদের নাম ও বিবরণ প্ৰদত্ত হইয়াছে। অচ্যুতবাবু তাহার ইতিবৃত্তে অনেকেরই নাম-ধাম দিয়াছেন। সাহ জালালের মৃত্যুর পর (অনুমান ১৪৯৪ খৃঃ) নবাব ইসপেন্দিয়ার শ্ৰীহট্ট শাসন করেন । তৎপরে রুকন খাঁ, গহির খাঁ, মোহাম্মদ খাঁ, সরওয়ার খাঁ, মীর খাঁ, ইউসুফ খাঁ, খোয়াজ ওসমান, লোদী খাঁ, জাহান খাঁ ক্ৰমান্বয়ে শ্ৰীহট্ট শাসন করেন। ইহাদের इब्रि नसांस१० । f উপাধি ছিল ‘কানুনগো”, কিন্তু সমস্ত রাজস্ব ও শাসনভার ইহাদের উপরই ন্যস্ত ছিল ; ইহাদের প্রত্যেকেরই শাসনকাল অত্যয় ছিল। বাদাসাহের কিছুকালের জন্য এক একজনকে কানুনগোর পদ দিয়া তাহদের নব-প্রীতির পাত্ৰাদিগকে সেই পদের সাহ জালালের দরগা ।