পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-শ্ৰীহট্ট S OS6 হবিগঞ্জের উত্তরে মাহুলিয়া গ্রামের “এণ্ডি’ (নমঃপূদ্রেরা ইহা প্ৰস্তুত করে), গায়ে দিবার যুগীদের “গোলাপ”, ৭০ হাত দীর্ঘ ৬ হাত প্ৰস্থ মৎস্য ধরিবার জাল, ঝাকিজাল', 'হুরাজাল', “খেতজাল’, ‘হৈফাজাল’, ‘উথালি জাল’, ‘সঙ্গাজাল’, ‘কাৰ্ত্তিজাল’, ‘হাটজাল’, ‘পেলুইনজাল', ‘বাখেরজাল’, ‘পাখীরজালি’ প্ৰভৃতি কত প্ৰকার জালই প্ৰস্তুত হইত ! তাহাদের উপযোগিতা ও প্রয়োজন কমে নাই। আমরা দুৰ্ব্ব দ্ধিবশতঃ এই শিল্পটি হারাইতেছি, পূর্ববঙ্গ বড় বড় मन-मौद्र লীলাভূমি—সেই নদনদীর তরঙ্গের সঙ্গে তাল রাখিয়া এই বিচিত্র শিল্প শ্ৰীসম্পন্ন হইয়া উঠিয়াছিল। সেই সকল নদনদী এখনও আছে, মৎস্যহারের প্রবৃত্তি কিছুমাত্র কমে নাই। ভদ্রলোকেরা এখন বহুমূল্য বিলাতী বড়শি লইয়া পুকুরের তীরে বকের মত বসিয়া থাকেন, কচিৎ দুই একটি মৎস্য দৈবযোগে তাহারা পাইয়া কৃতাৰ্থ হন। এখন প্রয়োজনের কথা কেহ বলে না । উহা সখে দাড়াইয়াছে। শ্ৰীহট্টের রণতবীি ও জাহাজ এক সময়ে বিখ্যাত ছিল । মোগলাধিকারের সময়ে লাউড়াধিপতিকে সমব-তরীই রাজস্বস্বরূপ দিতে হইত। ভাটেরার তাম্রফলকে ঈশান দেবের ‘সমরতরী'র উল্লেখ আছে। ১৭৮০ খৃষ্টাব্দে লিণ্ডসে সাহেব একাদশ সহস্র মণ-বাহী এক জাহাজ প্ৰস্তুত করাইয়াছিলেন। তাহা ছাড়া তিনি বিশখানি জাহাজের একটি বহর প্রস্তুত করিয়াছিলেন। এখনও হবিগঞ্জ অঞ্চলে দীর্ঘ “পালওয়ার নৌকা’ প্ৰস্তুত হইয়া থাকে । সুনামগঞ্জের সুরঞ্জিত কাঠের খেলান এবং কাষ্ঠপাদুকা ( খড়ম) বিশেষ উল্লেখযোগ্য । তরপের কচুয়াদি গ্রামে উৎকৃষ্ট বেহালা প্ৰস্তুত হয । নবিগঞ্জ ও আখাইলকুড়ার রথে কাষ্ঠ-শিল্পের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তাহা বিশেষ প্রশংসাযোগ্য। শ্ৰীহট্টের “পাটিয়ারা দাস” নামক এক শ্রেণীর লোক বেতের পাটী প্ৰস্তুত করিয়া থাকে। ইহা উৎকৃষ্ট নৈপুণ্যের পরিচায়ক। জলসুখা, জগন্নাথপুর, জাফরগড়, প্ৰতাপগড়, চাপঘাট প্রভৃতি স্থানে ঐ শিল্প বিশেষ শ্ৰীসম্পন্ন ছিল। এক একখানি পাটীর মূল্য ২০০২ টাকা পৰ্যন্ত হইত। ধুলিজুরার (ইটার অন্তৰ্গত) শিল্পী যাদুরাম দাস। ১৯০৬ খৃষ্টাব্দে কলিকাতার কৃষিপ্ৰদৰ্শনীতে ৯০২ টাকা মূল্যের একখানি পাটি দেখাইয়া স্বর্ণপদক পাইয়াছিলেন। ইহাছাড়া মেয়েদেব কঁাথা-শেলাই অতি উৎকৃষ্ট শিল্প ছিল। ঢাকা-দক্ষিণের মেয়েদের এ বিষয়ে কৃতিত্ব অসাধারণ ছিল । শ্ৰীহট্টের হাতীর দাতের কাজ, শাখা-শিল্প, চাচ” বা বঁশের দরমাতে অতি সুন্ম নৈপুণ্য প্ৰদৰ্শিত হইত। জগন্নাথপুর ও জলসুখা হইতে ১৯০২ খৃঃ অব্দে ১৪,০০০ মণ। দারমা বিভিন্ন দেশে প্রেরিত হইয়াছিল। শ্ৰীহট্টের শিল্পীর হাতের বঁাশের টুকরি, ধামা, পাখীর পিঞ্জর, পেটার, বাক্স, মোড়া, চেয়ার উল্লেখযোগ্য। শ্ৰীহট্টের পাতার ছাতি প্ৰশংসনীয়। সেখাঘাটস্থ কারিগরের হাতের বঁাশ ও বেত-নিৰ্ম্মিত একটি ছোট গৃহ ১৮৮৩ খৃষ্টাব্দের ইংলণ্ডের প্রদর্শনীতে বিশেষ প্ৰশংসা ও পারিতোষিক পাইয়াছিল। শ্ৰীহট্টের ঢাল একসময়ে ভারত-প্ৰসিদ্ধ ছিল। শ্ৰীহট্ট এক সময়ে কামান-নিৰ্ম্মাণের জন্য fits