পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-সুন্দরবন δΣ ΑΦ লক্ষ্মণসেনের সুন্দরবন ও দক্ষিণ-গোবিন্দপুরের তাম্রশাসন হইতে জানা যায়, সুন্দরবন ও তৎসন্নিকট প্রদেশ পৌণ্ডবৰ্দ্ধন-ভুক্তির অন্তৰ্গত খাড়িমণ্ডলের অধীন ছিল। তাম্রশাসনে উল্লিখিত “বেতড় চতুরকের” নাম হাওড়ার অন্তর্গত বেতড় গ্রামের নাম হইতে এবং খাড়িমণ্ডল ২৪-পরগনার খাড়ি গ্রামের নাম হইতে হইয়াছিল । ( বাঙ্গলার ইতিহাস, রাখালবাবু প্ৰণীত, ২য় সংস্করণ, পৃঃ ৩৩৫ ) । জয়নগর-মজিলপুরনিবাসী শ্ৰীযুক্ত কালিদাস দত্ত মহাশয় সুন্দরবনের ইতিহাস উদ্ধারকল্পে প্ৰাণপণ চেষ্টা করিতেছেন । তিনি এ সম্বন্ধে ইংরাজী ও বাঙ্গলায় বহু প্ৰবন্ধ ও পুস্তক প্ৰকাশিত করিয়াছেন এবং প্ৰাচীন শিল্পনিদর্শনগুলি সংগ্ৰহ করিয়া স্বয়ং একটি দুর্লভ চিত্ৰ শালা স্থাপন করিয়াছেন ; এই সন্দর্ভটি মূলতঃ তাহারই সাহায্যে লিখিত शछेळ । সম্প্রতি সুন্দরবনের “খাদি মণ্ডলে”র পূর্বভাগে “পাথর প্রতিমা” নামক পল্লীর নিকটে একখানি তাম্র-শাসন আবিষ্কৃত হইয়াছে। ইহা ১১৯৬ খৃষ্টাব্দে ( ১১১৮ শকে ) বাসুদেব নামক কাৰ্ণশাখার এক ব্ৰাহ্মণ-বটুকে ভূমি-দানপত্র । তাম্রাপটে শকাব্দ উৎকীর্ণ হওয়াতে কালসম্বন্ধে আমরা নিশ্চিত প্ৰমাণ পাইতেছি যে, মুসলমান-বিজয়ের অব্যবহিত পূর্বে সেনরাজারা আর খাদিমণ্ডলের অখণ্ড অধিপতি ছিলেন না, যেহেতু এই শাসনে স্পষ্টরূপে লিখিত হইয়াছে যে তৎসময়ের সার্বভৌম সম্রাটের ( সেন রাজার ) বিদ্রোহী অযোধ্যাগত শ্ৰীশ্ৰী ( অস্পষ্ট ) মহামাণ্ডলিক পালৌপাধিক কোন রাজা এই স্থান শাসন করিতেছিলেন। “পাথর প্ৰতিমা” পল্লীর অনতিদূরে এক বৃহৎ মন্দির ছিল, এবং তথাকার চতুঃপার্থে এত পাথর ও প্ৰাচীন কীৰ্ত্তির ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়, যদ্বারা সহজেই অনুমিত হয় যে এক সময়ে এ স্থানটি একটি সমৃদ্ধ নগরী ছিল। উক্ত পালরাজার সামন্ত-রাজ মড়ম্মান পাল এই ভূমি দান করিয়াছিলেন। তাম্রশাসনখানির প্রতিলিপি, ইংরেজী অনুবাদ ও তৎসম্বন্ধীয় অপরাপর বিবরণ ইণ্ডিয়ান এসিয়াটিক কোয়াটার্লিতে (দশম সংখ্যা, ২ জুন, ১৯৩৪ খৃঃ) অধ্যাপক ডাক্তার বিনয়চন্দ্ৰ সেন, এম. এ. পি এচ. ডি. (লণ্ডন) এবং শ্ৰীযুক্ত দেবপ্ৰসাদ ঘোষ প্ৰকাশ করিয়াছেন । ১৪৬৫ খৃষ্টাব্দের সন্নিহিত কোন সময়ে সুলতান রুকুনুদ্দিন বরাকের রাজত্বকালে দক্ষিণ দেশটা মুসলমানদের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে অধিকৃত হইয়াছিল। তৎপূর্বে সেনরাজগণের ংশধরগণ বহু চেষ্টায় হিন্দু অধিকার তথায় কথঞ্চিৎ রক্ষা করিয়াছিলেন। মুসলমানদের সময়ে দক্ষিণ বঙ্গের প্রসিদ্ধ গ্রামগুলির উল্লেখ বহু প্ৰাচীন বৈষ্ণবগ্রন্থে পাওয়া যায়। কথিত আছে মহাপ্ৰভু কুলীন গ্রামটিকে এত ভালবাসিতেন যে তিনি ঐ গ্রামের কুকুরটিকে নিজের অন্তরঙ্গ বলিয়া মনে করিতেন। এই কুলীন গ্রামেই ভাগবতের অনুবাদক মালাধর বসু, গুণরাজ খাঁ, রামানন্দ বম ও অপরাপর বৈষ্ণব জন্মগ্রহণ করেন, এক সময়ে এই অঞ্চলে রামানন্দ খাঁ অতি প্ৰসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। আকবরের সময়ে সুন্দরবন অরণ্যবহুল হওয়াতে করা আদায়ের অযোগ্য ছিল (Ayeeni