পাতা:বেণের মেয়ে - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী.pdf/৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।



প্রথম পরিচ্ছেদ

গাঁঠ, পাকা তল্লাবাঁশে বহুকাল তেল খাওয়াইয়া লাঠি লাল তুলিয়াছে। লাঠিয়ালও খুব জোয়ান, সাড়ে ছ’হাতের উপর মাথায় বাবরিকাটা বড় বড় চুল। তাহাদের লাঠি মাথার উপর আর দেড় হাত।

 হঠাৎ রাত্রি তিন প্ৰহরের পর চারিদিকে একটা সোরগোল পড়িয়া গেল। কা’ল দুপরে রাজগুরুর ভোজ। তারাপুকুরে এখন মাছ ধরা হইবে। তারাপুকুরের চারিদিকে প্ৰকাণ্ড পাড়, সেখানে যত বন জঙ্গল ছিল, সব সাফ করিয়াছে। পাছে মাছ চুরি করিয়া লইয়া যায়, তাই তারাপুকুরময় কঞ্চিশুদ্ধ হাজার হাজার বাঁশ ফেলা ছিল। আজ সমস্ত বাঁশ উঠাইয়া পাড়ের ওপারে ফেলিয়া দেওয়া হইয়াছে। কুন্তী নদী হইতে দুখানি দু’শ-মণী নৌকা আনিয়া তারাপুকুরে ভাসাইয়া দেওয়া হইয়াছে। কুন্তী নদী হইতে তারাপুকুর অন্ততঃ বিশ রশি তফাৎ। মোট মোটা গরাণের কাঠ ফেলিয়া তাহার উপর দিয়া, নৌকা দুখানিকে কাছি দিয়া টানিয়া পুকুরে ফেলা হইয়াছে। ভোর হইতে না হইতেই তারাপুকুরের মাছ-ধরার সরঞ্জাম সব প্ৰস্তুত। পুকুরটি যতখানি চওড়া, ততখানি লম্বা। একখানি জাল, জালের সুতাগুলি বহুকাল ধরিয়া গাবানতে এমন শক্ত হইয়াছে যে, মাছের সাধ্য কি উহা ছিঁড়িয়া পালায়। জালের তলার দিকে ইট ও পাথর বাঁধিয়া দেওয়া হইয়াছে। উপরে গোছা গোছা সোলার ফাত্না ভাসিতেছে। দুই পাড়ের ধারে দুই নৌকায় জেলেরা জালের দড়ি ধরিয়া বসিয়া আছে। এমন সময়ে ভাঙ্গা মন্দিরের ধারে হঠাৎ রূপা রাজা দেখা দিলেন। চারিদিক্ হইতে তাঁহার জয়ধ্বনি হইতে লাগিল—কেহ বলিল, মহারাজের জয়, কে বলিল, মহারাজাধিরাজের জয়, কেহ বলিল, রাজার জয়, কেহ বলিল, রূপারাজার জয়। রূপা মুহূর্তের মধ্যে “জাল টান” হুকুম দিয়াই অন্তর্ধান