পাতা:বেণের মেয়ে - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী.pdf/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
প্রথম পরিচ্ছেদ


কোথাও লোক নাই। যেখানে জাল, সেইখানেই লোক। একদিকে যেমন মাছের ঘপ্ঘপানি, আর একদিকে তেমনই লোকের কলরব। একজন চীৎকার করিয়া উঠিল,―“রাজার হুকুম―মুণ্কের নীচে মাছ ধরিবে না।” তখন বাছিয়া বাছিয়া একমণের নীচে যত মাছ ছিল, সক ছাড়িয়া দেওয়া হইল। তথাপি বহুসংখ্যক মাছ জালে বাধিয়া রহিল। এক একটা মাছ ডাঙ্গায় তুলিতে অনেক বড় বড় জোয়ান হিমসিম খাইয়া যাইতে লাগিল। বড় বড় শ'দুই মাছ ক্ৰমে তারাপুকুরের ভাঙ্গা মন্দিরের ধারে জড় হইল এবং সেখান হইতে গরুর গাড়ীতে রাজবাড়ীতে চালান হইল। ভিন্ন ভিন্ন গ্ৰাম হইতে যে সব লোক মাছ ধরা দেখিতে আসিয়াছিল, তাহাদিগকে এক একটি ছোটখাট মাছ দিয়া বিদায় করিয়া দেওয়া হইল। এইরূপে পূর্ণিমার দিন সকালবেলায় মাছধরা-পৰ্ব্ব শেষ হইল।

[ ২ ]

 রাজার গুরু মাছের আঁতড়ি খাইতে ভালবাসেন, পোঁটা ও তেল খাইতে ভালবাসেন । সুতরাং এত যে গাড়ী গাড়ী মাছ রাজবাড়ীতে গেল, সে মাছের যত দরকার থাক আর না থাক, মাছের তেল, আঁতড়ি আর পোঁটার বেশী দরকার। বড় বড় পট্পটি ফুটাইয়া গাদা করা হইতে লাগিল। তাহার পর এই সব জিনিস রাঁধে কে? সাতগাঁর চারিদিকে ৪৷৫ ক্রোশ ধরিয়া রূপ রাজার খুব প্ৰাদুৰ্ভাব। যে গ্রামে যিনি যে তরকারী রাঁধিতে ভাল পারেন, তাঁহাকে আনাইয়া সেই তরকারী রাঁধিবার ভার দেওয়া হইল। এক জন মাছের তেল দিয়া নানাপ্রকার বড়া ভাজিতে লাগিলেন, এক জন মাছের তেল দিয়া ছেঁচড়া তৈয়ার করিতে লাগিলেন, চচ্চড়ি নানা রকমের হইল। এ সব খাস রাজগুরুর জন্য। বাকি লোকের জন্য যে প্ৰয়োজন, তাহার বর্ণনা দরকার নাই ।