পাতা:বেদান্তগ্রন্থ - রামমোহন রায়.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

everal (RS) চলিয়াছিল। এই অবস্থায় রামমোহন অপরিজ্ঞাত থাকিবেন ইহাতে আশ্চৰ্য কি ? রামমোহনের বেদান্তগ্ৰন্থ পরিচিত না হওয়ার ইহাই প্ৰথম কারণ । গ্রন্থের অপ্ৰাপ্যতা বা দুস্তপ্রাপ্যতাই রামমোহনের বেদান্তগ্ৰন্থ প্ৰচারিত না হওয়ার দ্বিতীয় কারণ। এই গ্রন্থের প্রথমেই লিখিত হইয়াছে, ডাঃ গিরীন্দ্ৰ শেখর বসু মহাশয়ের পিতৃদেব পূজনীয় চন্দ্ৰশেখর বসু মহাশয় বেদান্তগ্রন্থের প্ৰথম এগারটা সূত্রের ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করিয়া আবার সেগুলির বিস্তৃত ব্যাখ্যা করিয়া এক গ্ৰন্থ লিখিয়াছিলেন । লেখককে ডাঃ বসু এই গ্ৰন্থ একখানা দিয়াছিলেন, রামমোহন বেদান্তগ্রন্থও লিখিয়াছিলেন, এই সঠিক সংবাদ লেখক এই গ্ৰন্থ হইতেই জানিয়াছিল। কিন্তু রামমোহনের গ্ৰন্থ ডাঃ বসু পান নাই, তাই লেখকও পায় নাই। রামমোহনকৃত সুত্ৰসকলের ব্যাখ্যা যথাযথ হইলেও অতি সংক্ষিপ্ত । দশখানি প্ৰধান উপনিষদ ও ব্রহ্মসূত্রের শঙ্করভাষ্য পড়া না থাকিলে রামমোহনের ব্যাখ্যার তাৎপৰ্যবোধ কঠিন। সাধারণ ব্ৰাহ্মসমাজে অন্ততঃ দুইজন পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন, যাহারা রামমোহনের সূত্রব্যাখ্যার বিশদীকরণের সুযোগ্য পাত্র ছিলেন। ইহাদের মধ্যে যিনি প্ৰথম, তিনি ডক্টর সুধেন্দুকুমার দাস ; তিনি ছিলেন। লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকটর ; বেদান্তই ছিল তার গবেষণার বিষয়। বেথুন কলেজে তিনি ছিলেন সংস্কৃতভাষার প্রধান অধ্যাপক। সুতরাং রামমোহনকে ব্যাখ্যা করিতে তিনিই 'যোগ্যতম পাত্ৰ ছিলেন, এ বিষয়ে সন্দেহ থাকিতে পারে না। দ্বিতীয়জন ছিলেন পূজনীয় সাধু উমেশচন্দ্র দত্ত মহাশয়ের তৃতীয় পুত্ৰ অধ্যাপক দেবকুমার দত্ত ; তিনি ছিলেন কৃষ্ণনগর কলেজে সংস্কৃতের প্রধান অধ্যাপক । তার লিখিত আত্মজ্যোতি; নামক ক্ষুদ্র পুস্তকখানি পড়িয়া পাঠকেরা সেকালে মুগ্ধ হইয়াছিল। বৃহদারণ্যকে যাজ্ঞবল্ক্যের উপদিষ্ট আত্মজ্যোতিঃ ছিল লেখকের বিষয়। এই পুস্তকই লেখকের উপনিষদে গভীর জ্ঞানের প্রমাণ । বেদান্তভাষ্য ও তিনি তখনও পড়িতেছিলেন, একথা লৈখক সেকালে শুনিয়াছিল। ডাকটর দাস এবং অধ্যাপক দত্ত, ইহাদের যে কোন একজন রামমোহনের বেদান্তভায্যের ব্যাখ্যা করিবার উপযুক্ত ছিলেন ; কিন্তু তাহারা করেন নাই, কারণ রামমোহন বেদান্ত ভাষ্য লিখিয়াছিলেন, এ সংবাদ তাহারা জানিতে পারেন নাই অথবা তাহারা বেদান্তগ্ৰন্থ সংগ্ৰহ করিতে পারেন নাই। যদি জানিতেন। তবে রামমোহনের বেদান্তগ্ৰন্থ বহু পূর্বেই তাঁহাদের দ্বারা ব্যাখ্যাত হইয়া প্রচারিত হইত।