পাতা:বৈকুন্ঠের উইল - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকুণ্ঠের উইল SV না গোকুল ? নইলে সে নিশ্চয় আসত। বলিতে বলিতেই তাহার চোখের কোণ বাহিয়া এক ফোটা জল গড়াইয়া পড়িল। এই কয় দিনের মধ্যে তিনি বিনোদের নাম একটিবারও মুখে আনেন নাই। সহসা শেষ সময়ে ছেলের নাম স্বামীর মুখে শুনিয়া ধিক্কারে, বেদনায় ভবানীর বুক ফাটিয়া গেল, কিন্তু তিনি তেমনি নীরবে অধোমুখে বসিয়া রহিলেন। গোকুল পিতার চোখ মুছাইয়া দিলে তিনি বলিলেন, চােখে তাকে দেখতে পেলুম না, কিন্তু তাকে বলিস। আমি আশীৰ্ব্বাদ করে যাচ্চি, একদিন সে ভাল হবে। এমন মায়ের পেটে জন্মে কখনো এ ভাবে চিরকাল কাটাতে পারবে না। দেখিস বাবা, সেদিন তোর ছোটভাইকে যেন ফেলিস নে। আর এই তোমার মা রইলেন-অনেক তপস্যায়। তবে এমন মা মেলে গোকুল ! গোকুল শিশুর মত কঁাদিতে কঁাদিতে কহিল, বাবা, আমার মা আমারই রইলেন, কিন্তু বিনোদকে আপনি অৰ্দ্ধেক সম্পত্তি দিয়ে যান । বৈকুণ্ঠ কহিলেন, না গোকুল, আমার অনেক দুঃখের সম্পত্তি —এ নষ্ট হ’তে দেখলে পরকালে বসেও আমার বুকে শেল বাজ বে। এ আমি কিছুতেই সইতে পারব না। বলিয়া অনেকক্ষণ পৰ্য্যন্ত ছেলের মুখের পানে চাহিয়া, বোধ করি বা মনে মনে র্তাহার শেষ আশীৰ্বাদ করিয়া চোখ বুজিলেন। গোকুল পায়ের উপর পড়িয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কঁদিতে লাগিল। বৈকুণ্ঠ ধীরে ধীরে পাশ ফিরিয়া শুইয়া শুধু চুপি চুপি বলিলেন, ছেলেরা রইল ছোটবোঁ, আমি এবার চললুম।