আনিয়াছিল। শূন্যপুরাণ সাহিত্য-পরিষদের জন্য নগেন্দ্র বাবু ছাপাইয়াছেন। আর একখানি পুস্তক পাইয়াছিলাম, অনেক কষ্টে, অনেক পরিশ্রমের পর ময়ূরভট্টের ধর্ম্মমঙ্গল; সেখানি বোধ হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীর লেখা; কারণ, তাহাতে রাঢদেশে বর্দ্ধমান ও মঙ্গলকোট প্রধান জায়গা। আর একখানি পুস্তক পাইয়াছিলাম, তাহা না বাঙ্গালা, না সংস্কৃত, এক অপরূপ ভাষায় লিখিত। মঙ্গলাচরণ-শ্লোকের শেষে আছে—“বক্তি শ্রীরঘুনন্দনঃ।” অর্থাৎ যিনি গ্রন্থ লিখিয়াছিলেন, তিনি আমাদিগকে বুঝাইয়া দিতে চান যে, তাহা রঘুনন্দনের অষ্টাবিংশতি তত্ত্বের এক তত্ত্ব; সুতরাং হিন্দুদিগের একখানি প্রমাণ-গ্রন্থ। উহাতে ধর্ম্মঠাকুরের ও তাঁহার আবরণ-দেবতাগণের উল্লেখ ও তাঁহাদের পূজাপদ্ধতির ব্যবস্থা আছে। এই পুথিখানি হইতে আরও বুঝিতে হইবে যে, রঘুনন্দনেরও পরে বাঙ্গালা দেশে এত বৌদ্ধ ছিল যে, তাহাদের জন্য একখানি তত্ত্ব লেখাও আবশ্যক হইয়াছিল।
আমি যখন এইরূপে বাঙ্গালা পুথি সংগ্রহ করিতেছি, তখন নগেন্দ্র বাবুও আমার মত পুথি সংগ্রহ করিতে লাগিলেন। তাঁহার পুথি-সংগ্রহ অন্যরূপ, তিনি ঘরে বসিয়া পুথি কিনিতেন। যাহারা পাড়াগাঁয়ে বটতলার বহি বেচিতে যায়, তারা বইয়ের বদলে পুথি লইয়া আসিত, নগেন্দ্র বাবু তাহাদের নিকট পুথি কিনিতেন। তিনি কত পুথি কিনিয়াছিলেন, জানি না; তবে তাঁহার পুথিগুলি এখন ইউনিভার্সিটিতে আছে। আমি প্রায় পাঁচ শত পুথি সংগ্রহ কবিয়াছিলাম। এশিয়াটিক সোসাইটির জন্যই সংগ্রহ করিয়াছিলাম, এশিয়াটিক সোসাইটিতে আছে।
এই সময়ে বাঙ্গালা পুস্তক-সংগ্রহ-বিষয়ে আমার একজন সহায় জুটিয়াছিলেন। কুমিল্লা স্কুলের হেড মাষ্টার শ্রীযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেন, বি. এ., বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস লিখিবেন বলিয়া এশিয়াটিক সোসাইটির সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং সোসাইটি তাঁহার চিঠি আমাকে পাঠাইয়া দেন। ইহাতে পূর্ব্ববাঙ্গালায় পুথি খোঁজার সুবিধা হইবে বলিয়া আমি আমার ট্রাবেলিং পণ্ডিত শ্রীযুক্ত বিনোদবিহারী কাব্যতীর্থ মহাশয়কে এক বৎসরের জন্য দীনেশ বাবুর কাছে রাখিয়া দিই এবং দীনেশ বাবুর কথামত বাঙ্গালা পুথি খরিদ করিতে বলি। আরও বলিয়া দিই যে, দীনেশ বাবু উহা যত দিন ইচ্ছা রাখিতে পারেন। দীনেশ বাবুর সাহায্যে পরাগলির মহাভারত, ছুটি খাঁর অশ্বমেধপর্ব্ব প্রভৃতি অনেকগুলি গ্রন্থ খরিদ হয়।
যখন ধর্ম্মঠাকুর সম্বন্ধে অনেকগুলি পুথি সংগ্রহ হইল এবং অনেক বৃত্তান্ত পাওয়া গেল, তখন ধর্ম্মঠাকুর যে বৌদ্ধ, আমি একটি বাঙ্গালা প্রবন্ধে সেইটি লিপিবদ্ধ করিলাম। এইরূপ লিপিবদ্ধ করার প্রধান কারণ এই যে, ঐ সম্বন্ধে বাঙ্গালায় যাহা কিছু পাওয়া গিয়াছে, তাহার একটা ইতিহাস লিখিয়া রাখিয়া, নেপালে হিন্দুরাজার অধীনে বৌদ্ধ ধর্ম্ম কিরূপ চলিতেছে, দেখিতে যাইব। সে প্রবন্ধ প্রকাশ করিবার আমার কিছুমাত্র ইচ্ছা ছিল না। প্রবন্ধটি যখন লিখিতেছি, তখন নগেন্দ্র বাবু আমার নৈহাটীর বাড়ীতে যান।