কথা ছিল, তিনি আমার সঙ্গে যাইবেন; তাঁহার যাওয়া হইল না, সেই কথা বলিবার জন্য তিনি নৈহাটী যান এবং সেখান হইতে সাহিত্য-পরিষদে দিব বলিয়া প্রবন্ধটি লইয়া আসেন। আসিয়া শুনিলাম, আমার অনুপস্থিতিতে যখন এই প্রবন্ধ পড়া হয়, তখন অনেকে ঘোরতর আপত্তি করিয়াছিলেন। একজন বলিয়াছিলেন,—ছিঃ! জেলে মালারা যে ধর্ম্মঠাকুরের পূজা করে, সে ধর্ম্মঠাকুর কি না বৌদ্ধ! ছিঃ!
যা হোক, আমি নেপাল হইতে আসিয়া “Discovery of Living Buddhism in Bengal” নামে একটি ইংরাজী প্রবন্ধ ছাপাই। এইবার প্রকাশ্যে বলিয়া দিই, ধর্ম্মঠাকুরের পূজাই বৌদ্ধধর্ম্মের শেষ।
আমি মনে করি, বাঙ্গালা পুথি খোঁজার এইটিই প্রথম ও প্রধান সুফল। ইহার দ্বারা আমরা বেশ জানিতে পারি যে, কেন ১২০০ শত বৎসর পূর্ব্বে আদিশূর রাজা বাঙ্গালা দেশে ব্রাহ্মণ আনাইবার জন্য এত ব্যস্ত হইয়াছিলেন, কেন ব্রাহ্মণদিগকে গ্রাম দান করিয়া বসাইবার জন্য রাজারা এত ব্যস্ত হইয়াছিলেন এবং কেন বাঙ্গালা দেশে কতকগুলি জাত আচরণীয় এবং কতকগুলি জাত একেবারে অনাচরণীয় হইয়া রহিয়াছে।
এইরূপ বাঙ্গালা পুথি খোঁজার আর একটি সুফল হইয়াছে। ইংরাজী ১৮৯৭-৯৮ খ্রীষ্টাব্দে যখন আমি দুই বার নেপালে যাই, তখন কতকগুলি সংস্কৃত পুস্তক দেখিতে পাই। উহার মধ্যে মধ্যে একরূপ নূতন ভাষায় কিছু কিছু লেখা আছে; হয় সেগুলি সংস্কৃতে যাহা লেখা আছে, তাহারই প্রমাণস্বরূপ, অথবা মূলটাই সেই ভাষায় লিখিত, টীকা সংস্কৃত। ডাকার্ণব নামে একখানি পুস্তক আছে, ইহার মাঝে মাঝে এইরূপ নূতন ভাষায় অনেক লেখা আছে। ডাকার্ণব নাম শুনিয়াই আমি মনে করিলাম, সেগুলি ডাকপুরুষের বচন হইবে এবং তাই মনে করিয়া উহার একখানি নকল লইয়া আসি। পড়িয়া দেখি, সে বাঙ্গালা নয়, কি ভাষায় লিখিত, তাহা কিছুই স্থির করিতে পারিলাম না। আর একখানি পুস্তক পাইলাম, তাহার নাম ‘সুভাষিত-সংগ্রহ,’ উহারও মধ্যে মধ্যে একটি নূতন ভাষায় কিছু কিছু লেখা আছে এবং আর একখানি পুস্তক দেখিলাম—‘দোঁহাকোষ-পঞ্জিকা’।
‘সুভাষিত-সংগ্রহ’খানি বেণ্ডল সাহেব নকল করিয়া লইলেন এবং ‘দোঁহাকোষ-পঞ্জিকা’খানি আমি নকল করিয়া লইলাম। বেণ্ডল সাহেব ‘সুভাষিত-সংগ্রহ’খানি ছাপাইয়াছেন এবং ছাপাইবার সময় আমার দোঁহাকোষ-পঞ্জিকাখানি লইয়া যান, আমি সেখানি আর ফিরিয়া পাই নাই। পরে শুনিতে পাইলাম, যে পুথিখানি হইতে আমার দোঁহাকোষ-পঞ্জিকা নকল হইয়াছিল, তাহা জাপানে চলিয়া গিয়াছে। ১৯০৭ সালে আবার নেপালে গিয়া আমি কয়েকখানি পুথি দেখিতে পাইলাম। একখানির নাম ‘চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়’, উহাতে কতকগুলি কীর্ত্তনের গান আছে ও তাহার সংস্কৃত টীকা আছে। গানগুলি বৈষ্ণবদের কীর্ত্তনের মত, গানের নাম “চর্য্যাপদ”। আর একখানি পুস্তক পাইলাম—তাহাও দোঁহাকোষ, গ্রন্থকারের নাম সরোরুহবজ্র, টীকাটি সংস্কৃতে, টীকাকারের নাম