পাতা:বৌদ্ধগান ও দোহা.djvu/১৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০
মুখবন্ধ

নিকট গেলেন। শান্তিদেব তাঁহার নিকট বার বৎসর রহিলেন এবং মঞ্জুশ্রী সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করিলেন। বার বৎসরের পর তাঁহার গুরু বলিলেন, তুমি মধ্যদেশে যাও। শান্তিদেব মধ্যদেশে গিয়া মগধের রাজার রাউত হইলেন। রাউত শব্দ এখন প্রচলিত নাই। পূর্ব্বে এ কথাটি বেশ চলিত ছিল, উহার অর্থ সেনাপতি। আমাদের দেশের গন্ধবেণেদের চারিটি আশ্রম আছে, তাহার মধ্যে একটি রাউত আশ্রম অর্থাৎ রাউতাশ্রমের বেণেরা শুধু ছাউনিতে মসলা বিক্রয় করিত। অনেক বড় বড় নগরে রাউতপাড়া নামে একটি পাড়া থাকিত। রাউত হইয়া শান্তিদেবের নাম হইল অচলসেন। তাঁহার একখানি দেবদারু কাঠের তরবারি ছিল, তিনি সে তরবারি কাহাকেও দেখাইতেন না। ক্রমে তিনি রাজার একজন প্রধান প্রিয়পাত্র হইয়া উঠিলেন, অন্যান্য রাউতেরা তাঁহার হিংসা করিতে লাগিল, ক্রমে তাহারা টের পাইল যে, অচলসেনের তরবারি কাঠের। তাহারা রাজাকে বলিল—আপনি অচলসেনকে এত ভালবাসেন, ওর তরবারি ত কাঠের, ও কি করিয়া যুদ্ধ করিবে? তাই শুনিয়া রাজা এক দিন হুকুম দিলেন, আমি সকলের তরবারি পরীক্ষা করিব। সকলেই তরবারি দেখাইল, অচলসেন কিছুতেই রাজি হইল না। রাজা জিদ করিতে লাগিলেন। তখন সে বলিল, আমার তলয়ারের তেজে আপনি অন্ধ হইয়া যাইবেন। যদি নিতান্ত দেখিতে চান, একটি চক্ষু বাঁধিয়া রাখুন, অপর চক্ষে দেখুন। রাজা তাহাই করিলেন, তাঁহার একটি চক্ষু কাণা হইয়া গেল। রাজা খুব খুশী হইলেন এবং অচলসেনের খুব প্রশংসা করিতে লাগিলেন; কিন্তু আচলসেনের আর রাউতগিরি করা হইল না। সে পাথরের উপর আছড়াইয়া তলয়ারখানি ভাঙ্গিয়া ফেলিল, রাউতের বেশ ত্যাগ করিল এবং নালন্দায় গিয়া ভিক্ষু হইল। সে নালন্দার এক প্রান্তে একখানি কুঁড়ে করিল এবং সেইখানেই বাস করিতে লাগিল। সে ত্রিপিটকের ব্যাখ্যা শুনিত এবং যোগ করিত। সে সর্ব্বদা শান্তভাবে থাকিত, তাই লোকে তাকে শান্তিদেব বলিত। নালন্দার সঙ্ঘে তাহার আর একটি নাম হইয়াছিল ভুসুকু; কারণ, “ভুঞ্জানোপি প্রভাস্বরঃ সুপ্তোপি কুটিং গতোপি তদেবেতি ভুসুকুসমাধিসমাপরত্বাৎ ভুসুকুনামখ্যাতিং সঙ্ঘেঽপি।” অর্থাৎ ভোজনের সময় তাঁহার মূর্ত্তি উজ্জ্বল থাকিত, শয়নের সময় উজ্জ্বল থাকিত এবং কুটিতে বসিয়া থাকিলেও উজ্জ্বল থাকিত।

 এইরূপে বহু দিন যায়। শান্তিদেব কাহারও সহিত বড় একটা কথা কহিতেন না, আপন মনে আপন কাজ করিয়া যাইতেন, কিন্তু ছেলেগুলা তাঁহার সহিত দুষ্টামি আরম্ভ করিল। অনেকের সংস্কার হইল, তিনি কিছু জানেন না, সুতরাং এক দিন তাঁহাকে অপ্রস্তুত করিতে হইবে। নালন্দায় রীতি ছিল, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লাষ্টমীতে পাঠ ও ব্যাখ্যা হইত, নালন্দার বড় বিহারের উত্তর-পূর্ব্ব কোণে এক প্রকাণ্ড ধর্ম্মশালা ছিল, পাঠ ও ব্যাখ্যার জন্য সেই ধর্ম্মশালা সাজান হইত। সব পণ্ডিতেরা সেখানে আসিতেন এবং অনেক লোক শুনিতে আসিত। যখন সভা বসিয়াছে, পণ্ডিতেরা আসিয়াছেন, সব প্রস্তুত, ছেলেরা ধরিয়া বসিল,—শান্তিদেব, তোমায় আজ পাঠ ও ব্যাখ্যা করিতে হইবে। শান্তি যতই গররাজি হন, ছেলেরা ততই