কেবল অদ্বৈত, দ্বৈতের ভাঁজও নাই। বাঙ্গালায় অদ্বৈত মত অধিক চলিত, সেই জন্য বাঙ্গালী অদ্বৈত মতের যেন আধারই ছিল। গ্রন্থকার এখানে বলিতেছেন,—রে ভুসু, তোমার নিজ ঘরিণী যে অবধূতী ছিল, তাহাকে চণ্ডালী করিয়া লইলে, এইবার তুমি সত্য সত্যই বাঙ্গালী হইলে অর্থাৎ পূর্ণ অদ্বৈত হইলে।]
তুমি মহাসুখরূপ অনলের দ্বারা পঞ্চস্কন্ধাশ্রিত সমস্ত দগ্ধ করিয়াছ। তোমার ইন্দ্রিয়বিষয় ও সংজ্ঞাও নষ্ট হইয়াছে। এখন জানি না, আমার চিত্ত কোথায় গিয়া পঁহুছিল, আমার শূন্য তরুর কিছুই রহিল না। সে আপন পরিবারে মহাসুখে থাকিল, আমার চার কোটি ভাণ্ডার সব লইয়া গেল, এখন জীবনে ও মরণে কিছুই বিশেষ নাই। রাউতের আর একটি গান এই;—
আইএ অণুঅনাএ জগ রে ভাংতি এঁসো পড়িহাই
রাজসাপ দেখি জো চমকিই ষারে কিং তং বোড়ো খাই॥ ধ্রু॥
অকট জোইআ রে মা কর হথা লোহ্ণা
আইস সভাবেঁ জই জগ বুঝষি তুট বাষণা তোরা॥ ধ্রু॥
মরুমরীচিগন্ধনইরীদাপতি বিম্বু জইসা
বাতাবত্তেঁ সে দিট ভইআ অপেঁ পাথর জইসা॥ ধ্রু॥
বাঁদ্ধি সুআ জিম কেলি করই খেলই বহুবিধ খেড়া
বালুআতেলেঁ সসরসিংগে আকাশ ফুলিলা॥ ধ্রু॥
রাউতু ভণই কট ভুসুকু ভণই কট সঅলা অইস সহাব
জই তো মূঢ়া অচ্ছসি ভান্তী পুচ্ছতু সদ্গুরু পাব॥ ধ্রু॥ [পত্রাঙ্ক ৬৩]
জগৎ যে অনুৎপন্ন, পরমার্থজ্ঞ যাঁরা, তাঁরা এ কথা জানেন। তাঁহারা জানেন যে, জগৎকে সৎ বলা ভ্রান্তি মাত্র। দড়িকে রাজসাপ বলিয়া যাহারা চমকিয়া উঠে, সত্য সত্যই বোড়া সাপে কি তাহাদের খায়? ভ্রম গেলেই সত্য প্রকাশ হয়। কি আশ্চর্য্য, হে বালযোগিন্, ইহাতে হাত লোনা করিও না, যদি জগতের শূন্যস্বভাব অবগত হও, তাহা হইলে তোমার বাসনা দূর হইবে। মরীচিকা, গন্ধর্ব্ব-নগর, দর্পণ-প্রতিবিম্ব যেরূপ, জগৎও সেইরূপ। বাতাবর্ত্তে দৃঢ় হইয়া জল যেমন পাথর হয়, জগৎও সেইরূপ। জগৎ বন্ধ্যা স্ত্রীলোক, তিনি পুত্রবতীর ন্যায় কেলি করেন ও বহুবিধ খেলা দেখান। বালি হইতে তেল বাহির করেন, শশকের শৃঙ্গ বাহির করেন ও আকাশে ফুল ফোটান। রাউতু বলেন,—কি আশ্চর্য্য, ভুসুকু বলেন,—কি আশ্চর্য্য। সকলেরই একই স্বভাব। রে মূর্খ! তোর যদি ভ্রান্তি থাকে, তবে সদ্গুরুর কাছে গিয়া জিজ্ঞাসা কর।
কৃষ্ণাচার্য্যের একখানি পুস্তক আছে, তাহার নাম দোঁহাকোষ। উহাতে তেত্রিশটি দোঁহা আছে। প্রথম দোঁহাটি এই;—