এইগুলি যে বাঙ্গালা, তাহা প্রমাণ করিবার আরও দুইটি কারণ আছে। (১) একজন ফরাসীস্ পণ্ডিত তেঙ্গুরের ১০৮ হইতে ১৭৯ বাণ্ডিলে যত তন্ত্রের পুথি আছে, তাহার এক তালিকা দিয়া গিয়াছেন। ঐ তালিকায় গ্রন্থকারের নাম, তর্জ্জমাকারের নাম, অনেক স্থলে যে স্থানে বসিয়া তর্জ্জমা হয়, সেই স্থানের নাম এবং কয়েক স্থলে যাঁহারা এই তর্জ্জমা শোধন করিয়াছেন, তাঁহাদেরও নাম দিয়া গিয়াছেন। যে ফরাসীস্ পণ্ডিত এই তালিকাটি ছাপাইয়াছিলেন, তাঁহার নাম P. Cordier—তিনি ফরাসডাঙ্গার ডাক্তার সাহেব ছিলেন, তাঁহার সহিত আমার বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি অনেক সময় আমার বাড়ী আসিতেন, আমিও অনেক সময় তাঁহার বাড়ী যাইতাম। তিনি এখান হইতে পণ্ডিচেরীর ডাক্তার সাহেব হইয়া যান, সেখান হইতে প্যারি নগরে কিছু কাল বাস করিয়া আবার পূর্ব্ব উপদ্বীপে ফরাসীদের যে রাজ্য আছে, তাহার ডাক্তার সাহেব হইয়া আসেন। অল্প দিন হইল, তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে। তিনি ভারতবর্ষীয় ও তিব্বতীয় পুথিপাঁজির অনেক খোঁজ রাখিতেন। বৈদ্য-শাস্ত্রের পুথির উপর তাঁহার বিশেষ ঝোঁক ছিল। তিনি প্রায় চারি পাঁচ শত বৈদ্য-শাস্ত্রের পুথি সংগ্রহ করিয়াছিলেন। তাঁহার তালিকাতে যত গ্রন্থকার, তর্জ্জমাকার, শোধক ও স্থানের নাম পাওয়া গিয়াছে, আমি তাহার একটি অকারাদিক্রমে সূচী প্রস্তুত করিয়াছি ও এই পুস্তকের শেষে দিয়া দিয়াছি।[১] সে সূচীতে যাঁহাকে বাঙ্গালী অথবা বাঙ্গালা দেশের লোক বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে, তাঁহার যদি বাঙ্গালা সংকীর্ত্তনের পদ থাকে, সে পদ যে খাঁটী বাঙ্গাল, তাহা আমি নিশ্চয় করিয়া লইয়াছি। (২) পরে তাঁহার সেই পদগুলিতে যত শব্দ পাওয়া গিয়াছে, অকারাদিক্রমে তাহার একটি তালিকা প্রস্তুত করিয়া সে কালের বাঙ্গালা ও এ কালের বাঙ্গালায় কি তফাৎ, তাহা দেখিয়া লইয়াছি। তাহাতে সে কালের বাঙ্গালার ব্যাকরণ ও অভিধান সম্বন্ধে আমার একটা ধারণা হইয়াছে। সেই ধারণা লইয়া অন্য যে সকল পদ পাইয়াছি, তাহারও অকারাদিক্রমে সূচী করিয়া লইয়া মিলাইয়াছি। তাহাতে যে সকল পদ বাঙ্গালা বলিয়া মনে হইয়াছে, তাহাকে বাঙ্গালা বলিতে কুণ্ঠিত হই নাই। একজন পদকর্ত্তার বাড়ী উড়িষ্যা দেশে, তাঁহার গানটিও উড়িয়া ভাষায় লিখিত। তাহাতে বাঙ্গালায় যেখানে ক্রিয়ার শেষে ‘ল’ থাকে, তাহাতে সেখানে ‘ড়’ আছে; যেমন ‘গাহিল’—‘গাহিড়’। সে পদটিকে আমি উড়িয়া ভাষার পদ বলিয়া স্থির করিয়াছি। এইরূপে বিশেষরূপে পরীক্ষা করিয়া যে ফল হইয়াছে, তাহাই এ পুস্তকে দিয়াছি। অকারাদিক্রমে প্রতি পদকর্ত্তার গানের প্রত্যেক কথার সূচী প্রস্তুত করিতে আমি দুই জন লোকের নিকট বিশেষ সহায়তা প্রাপ্ত হইয়াছি। একজন শ্রীযুক্ত ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়, আমার ভ্রমণকারী পণ্ডিত, আর সাহিত্য-পরিষদের পুথিখানার মালিক শ্রীযুক্ত বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ। বসন্ত বাবুর বয়স কত জানি না, কিন্তু তাঁহার দাড়ি সব পাকিয়া গিয়াছে; কিন্তু এ বয়সেও যেরূপ উৎসাহের সহিত সূচী প্রস্তুত বিষয়ে আমার
- ↑ বর্ত্তমান সংস্করণে এই সুবৃহৎ “বৌদ্ধতান্ত্রিক-গ্রন্থকার-নাম-সূচী” অংশ বর্জ্জিত হইয়াছে।