কৃষ্ণাচার্য্যের দোঁহাকোষ ও তাহার টীকা, তাঁহারই উপদেশমত পুথিখানার লেখকেরা লিখিয়া আমায় উপহার দিয়াছিলেন, তাহাও আমি ছাপাইয়াছি। ইহার মূল পুথি এখন জাপানে আছে।
১৯০৭ সালে আমি নেপাল গিয়াছিলাম। তখন যে সকল পুস্তক পাইয়াছিলাম, তাহার একটা বিবরণ প্রকাশ করিয়াছিলাম এবং তখনই আমি বলিয়ছিলাম, বাঙ্গালা পুস্তকগুলি আমি ছাপাইব। ছাপাইতে বিলম্ব অনেক হইয়াছে। ইহাতে অনেক ‘সাহিত্যামোদী’ অত্যন্ত ব্যস্ত হইয়াছিলেন; অনেকে বলিয়াছিলেন,—“আমায় কেন দাও না, আমি ছাপাইয়া দিতেছি।” অনেকে বলিয়াছিলেন,—“শাস্ত্রী মহাশয় যক্ষের ধনের মত এই সকল অমূল্য রত্ন লুকাইয়া রাখিয়াছেন, কাহাকেও দেখিতে দিবেন না।” কিন্তু এই সকল ছাপাইতে যে কি পরিমাণ কাঠ-খড় দরকার, আমার মনে হয়, তাঁহারা তত জানিতেন না, তাই অত ব্যস্ত হইয়াছিলেন। অনেকে আছেন,—একটা নূতন কথা পাইলে তৎক্ষণাৎ তাহা ছাপাইয়া দিয়া নাম করেন। আমার সে প্রবৃত্তি নাই। তাই আমি মনে করিয়াছিলাম, বরং ছাপাইব না, তথাপি তাড়াতাড়ি করিয়া জিনিসটা নষ্ট করিব না। ভ্যাসিলিয়েফ বলিয়াছিলেন যে, অপভ্রংশ ভাষায় অনেক বৌদ্ধ গ্রন্থ আছে। প্রোফেসর বেণ্ডল সুভাষিত-সংগ্রহ নামে একখানি পুস্তক ছাপাইয়াছিলেন, তাহাতে অপভ্রংশ ভাষার কতকগুলি দোঁহা ছিল। আমি দেখিয়াছিলাম, সে দোঁহাগুলি পুরাণ বাঙ্গালা। তাঁহারা দুজনেই বলিয়াছিলেন যে, তেঙ্গুরে এই সকল অপভ্রংশ পুস্তকের তর্জ্জমা আছে। কিন্তু ভুটিয়া শিখিয়া তেঙ্গুর পড়িয়া পুস্তক ছাপান আমার পক্ষে অসাধ্য হইয়াছিল। সুখের কথা, কয়েক বৎসর হইল, কর্ডিয়ার সাহেব ঠিক যে অংশে ঐ সকল পুস্তকের কথা আছে, তাহার তালিকা ছাপাইয়া দিয়াছেন। তাহাতে আমার বিস্তর উপকার হইয়াছে। এ তালিকা না পাইলে বোধ হয় আমার পুস্তক ছাপাইতে সাহস হইত না।
পুস্তক ছাপাইতে অনেক বিলম্ব হওয়ায় আমার কোন কোন আত্মীয় মনে করিয়াছিলেন, টাকার জন্যই আমি পুস্তক ছাপাইতে পারিতেছি না। তাই তাঁহারা লালগোলার রাজা শ্রীযুক্ত রাও যোগীন্দ্রনারায়ণ রায় বাহাদুরের নিকট এই পুস্তক ছাপাইবার খরচের জন্য বলেন। বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রতি রাজা বাহাদুরের অনুরাগ অসীম। তিনি শুনিবামাত্র সাহিত্য-পরিষদে যে টাকা দিয়া থাকেন, তাহা হইতে উহার খরচ দিতে রাজী হন এবং উহা সাহিত্য-পরিষৎ-পুস্তকাবলীর মধ্যে লইবেন বলিয়া স্থির হয়। কিন্তু ইহার মধ্যে আবার এক গোল উঠিল। আমি সাহিত্য-পরিষদের সভাপতি নিযুক্ত হইলাম। সভাপতি হইয়া সাহিত্য-পরিষদের খরচায় বই ছাপাইব, ইহা আমার ভাল লাগিল না। আমি রাজা বাহাদুরকে সে কথা জানাইলাম। তখন রাজা বাহাদুর স্বতন্ত্র ভাবে ঐ পুস্তক ছাপাইতে দিবেন এবং তাহার খরচ দিবেন, স্বীকার করিলেন। তিনি টাকা না দিলে এ পুস্তক এখন যে ভাবে ছাপা হইতেছে, এত ভাল কাগজে, এত ভাল ছাপায়, এত বেশী ফটোগ্রাফ দিয়া,