পাতা:বৌদ্ধগান ও দোহা.djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পদকর্ত্তাদের পরিচয়

১। লুই

 যে তেত্রিশ জন পদকর্ত্তার নাম করিব, তাঁহাদের প্রথমেই লুইপাদের নাম করিতে হয়। কারণ, তেঙ্গুরে বাঙ্গালী বলিয়াই তাঁহার উল্লেখ আছে। তাঁহার সম্বন্ধে আর যে যে খোঁজ পাওয়া গিয়াছে, তাহা পূর্ব্বেই বলিয়াছি, সুতরাং এখানে বলিবার দরকার নাই। আমি স্থির করিয়াছি যে, তিনি রাঢ়দেশের লোক ছিলেন। তিনি এক নূতন সম্প্রদায় চালাইয়া যান। তাঁহাকে আদিসিদ্ধাচার্য্য বলে। তাঁহার সম্প্রদায়ের লোক সকলেই সিদ্ধ বলিয়া বিখ্যাত ছিলেন। তিনি যে বাঙ্গালী, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। সংস্কৃতে তাঁহার চারিখানি পুস্তক আছে। একখানির নাম ‘বজ্রসত্ত্বসাধন’,—এখানি পুরুতের পুথি। একখানি ‘বুদ্ধোদয়’,—এখানি অতি ছোট। তাঁহার নিজের মতে কি প্রকারে বুদ্ধের জ্ঞান লাভ করা যায়, তাহারই কথা। বাকী দুখানি অভিসময়ের পুথি;—একখানি ‘শ্রীভগবদভিসময়’, আর একখানির নাম ‘অভিসময়বিভঙ্গ’। দুখানিই বড় পুথি। অভিসময় বলিতে গেলে অভিধর্ম্ম অর্থাৎ দর্শনশাস্ত্রের পুথি বুঝায়। হীনযানে যাহাকে অভিধর্ম্ম বলে, মহাযানে তাহাকেই অভিসময় বলে। লুইপাদের অভিসময়ের পুস্তক দুখানি তাঁহার নিজের দর্শনশাস্ত্রের মত। এই দুইখানি ছাড়া তিনি একখানি বাঙ্গালা পুথি লিখিয়ছিলেন, তাহার নাম ‘তত্ত্বস্বভাবদোহাকোষগীতিকা দৃষ্টি’। এ পুস্তকখানি আমরা পাই নাই, কিন্তু এখানি যখন দোঁহাকোষ, তখন এখানি নিশ্চয় বাঙ্গালা। এতদ্ভিন্ন ‘লুহিপাদগীতিকা’ নামে তাঁহার একখানি বাঙ্গালা সংকীর্ত্তনের পদাবলী আছে। উহার দুইটি পদ আমরা পাইয়াছি। উহাতে তিরানব্বইটি কথা আছে। উহার মধ্যে ষোলটি সংস্কৃত শব্দ—সবগুলি আজও বাঙ্গালায় চল্‌তি আছে। যথা,—‘আগম’, ‘উদক’, ‘উহ’, ‘করণক’, ‘কাল’, ‘চঞ্চল’, ‘চিহ্ণ’, ‘তরু’, ‘ন’, ‘পঞ্চ’, ‘পরিমাণ’, ‘বর’, ‘বেণি’, ‘ভাব’, ‘রে’, ‘সুখ’। চুয়াল্লিশটি বাঙ্গালা শব্দের প্রাচীন অবস্থা দেখাইতেছে; যথা,—‘অচ্ছম’, ‘আহ্মে’, ‘আস’, ‘এড়িএউ’, ‘করিঅ’, ‘করিঅই’, ‘কাআ’, ‘কাহি’, ‘কাহেরে’, ‘কিষ’, ‘কীষ’, ‘কো’, ‘চান্দ’, ‘ছান্দক’, ‘জা’, ‘জাই’, ‘জাহের’, ‘জিম’, ‘তাহের’, ‘দিট’, ‘দিবি’, ‘দিস’, ‘দুখেতেঁ’, ‘পতিআই’, ‘পাখ’, ‘পুচ্ছিঅ’, ‘বইঠা’, ‘বখাণী’, ‘বট’, ‘বান’, ‘বান্ধ’, ‘বিলসই’, ‘ভণই’, ‘ভণি’, ‘ভাইব’, ‘ভিতি’, ‘মরিআই’, ‘মিচ্ছা’, ‘লই’, ‘লাহু’, ‘সাচ’, ‘সাণে’, ‘সাে’, ‘হোই’। আটটি চলিত বাঙ্গালা—‘জাণ’, ‘জাণী’, ‘ডাল’, ‘দুলক্খ’, ‘পাটের’, ‘পাস’, ‘লাগে’, ‘সুনু’, এই আটটি। প্রাকৃত শব্দ কুড়িটি—‘অইস’, ‘কইসে’, ‘চীএ’, ‘ণ’, ‘ণা’, ‘তিঅধাএ’, ‘দিঠা’, ‘নিচিত’, ‘পইঠো’, ‘পাণ্ডি’, ‘পিরিচ্ছা’, ‘বি’, ‘বিণাণা’, ‘বেএঁ’, ‘মই’, ‘মহাসুহ’, ‘রূব’, ‘সংবােহেঁ’, ‘সঅল’, ‘সমাহিঅ’, ‘সুহ’। লুই ও লূই দুইটিই পদকর্ত্তার নাম। ‘ধমণ’ আর ‘চমণ’ কি কথা, জানি না; পারিভাষিক শব্দ বােধ হয়।