পাতা:বৌদ্ধগান ও দোহা.djvu/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
পদকর্ত্তাদের পরিচয়

না, ‘কিং’ চলে না, ‘মা’ চলে না। বাকীগুলি বেশ চলে। বাঙ্গালা বত্রিশটি ত চলেই, বাঙ্গালার পূর্ব্বাভাস যে ১৮৬টি কথা আছে, তাহা সে কালের বাঙ্গালায় চলিত। বাকী যে ৬৮টি কথা, ভুসুকু তাহার সংস্কৃত উচ্চারণ বদলাইয়া লইয়াছেন, তাহারও অধিকাংশ প্রাচীন বাঙ্গালায় চলিত। ইহার মধ্যে অনেকগুলি কেবল বানান বদলান মাত্র—যেমন ‘ষষহর’, ‘ষহজ’, ‘সসর’, ‘সেস’। এগুলি লেখকের ভুল হইতে পারে, অথবা সে কালের লোক বানানটা বড় গ্রাহ্য করিত না। সম্বন্ধের বিভক্তি ‘র’, অধিকরণের বিভক্তি ‘এ’ বা ‘এঁ’ সম্পূর্ণ বাঙ্গালা। হিঅহিঁ, তহিঁ মাগধীর অধিকরণ-কারক। ‘অচ্ছসি’র মধ্যম পুরুষে একবচনে ‘সি’ প্রাচীন বাঙ্গালায় ব্যবহার হইত। অনুজ্ঞায় ‘অচ্ছহু’র ‘হু’ও প্রাচীন বাঙ্গালায় দেখা যায়। ‘জানমি’র উত্তম পুরুষের ‘মি’ও প্রাচীন বাঙ্গালায় অনেক স্থলে দেখা যায়। সুতরাং ভুসুকুর ভাষা আমরা অনায়াসেই প্রাচীন বাঙ্গালা বলিয়া গ্রহণ করিতে পারি।

৫। কৃষ্ণাচার্য্য

 কৃষ্ণপাদ, কৃষ্ণাচার্য্য, কৃষ্ণবজ্র বা কাহ্নুপাদ সর্ব্বশুদ্ধ ৫৭ খানি বই লিখিয়া গিয়াছেন। তাহার মধ্যে দুইখানি বাঙ্গালা, একখানি ‘দোঁহাকোষ’, আর একখানি ‘কাহ্নুপাদগীতিকা’। আমরা কৃষ্ণাচার্য্যের ১২টি সংকীর্ত্তনের পদ পাইয়াছি। কিন্তু তিনি কোন্ দেশের লোক, তাহা লইয়া বিশেষ গোল আছে। তেঙ্গুরে পনর জায়গায় তাঁহাকে ভারতবাসী বলিয়া গিয়াছে। কেবল এক জায়গায় লেখা—তিনি ব্রাহ্মণ, উড়িষ্যা হইতে আগত, সেও আবার তর্জ্জমাকার মহাপণ্ডিত কৃষ্ণ, তিনি গ্রন্থকার নহেন। সুতরাং তেঙ্গুরের লেখা হইতে পদকর্ত্তা কৃষ্ণের বাসস্থান নির্ণয় হইবে না। তাহার পর আবার কৃষ্ণ, কানু অনেক লোকের নাম হইতে পারে। এই যে ৫৭ খানি গ্রন্থের গ্রন্থকার একই কৃষ্ণ, তাহাই বা কে বলিতে পারে? কোন জায়গায় কৃষ্ণকে মহাচার্য্য বলা হইয়াছে, কোন জায়গায় মহাসিদ্ধাচার্য্য, কোন জায়গায় উপাধ্যায়, কোন জায়গায় মণ্ডলাচার্য্য বলা হইয়াছে। এক জায়গায় আবার তাঁহাকে ছোট কৃষ্ণ বলা হইয়াছে। পাঁচ জায়গায় তাঁহাকে কৃষ্ণাচার্য্য বা কাহ্নুপাদ বলা হইয়াছে। সুতরাং তেঙ্গুর হইতে যখন তাঁহার বাড়ী ঠিক হইল না, তখন তাঁহার ভাষা বিশেষরূপে পরীক্ষা করিতে হইবে। তাঁহার গানগুলিতে সর্ব্বশুদ্ধ ৪৩৮টি শব্দ আছে। ইহার মধ্যে সংস্কৃত শব্দ ৬৮টি। তাহার মধ্যে ৪টি বৌদ্ধ শব্দ, যথা—‘এবংকার’, ‘তথতা’, ‘তথাগত’ আর ‘দশবল’। আর তিনটি কথা বাঙ্গালায় চলিত নাই, যথা—‘উ,’ ‘মা’ ও ‘ভবপরিচ্ছিন্না’, বাকী ৬০টি শব্দ এখনও বাঙ্গালায় চলিতেছে। ৫৫টি চলিত বাঙ্গালা কথা বাঙ্গালাতেই চলে, অন্য কোন নিকটবর্ত্তী ভাষায় চলে না। ১৮৬টি শব্দ আমরা বাঙ্গালা পুরাণ পুথিতে দেখিতে পাই—এখনকার বাঙ্গালায় এই সকল শব্দ হইতে উৎপন্ন শব্দ চলিতেছে, যেমন—‘বোব্’—বোবা, ‘বোল’—বুলি, ‘ভলি’—ভাল, ‘দেহু’—দে, ‘মালী’—মালা ইত্যাদি। সংস্কৃত হইতে উৎপন্ন, অথচ বাঙ্গালায় প্রচলিত নাই, এমন ১২৯টি শব্দ আছে। উহার মধ্যে