পাতা:বৌদ্ধগান ও দোহা.djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পদকর্ত্তাদের পরিচয়
২৫

কতকগুলি শব্দ, যথা—‘অইস,’ ‘কৈসন,’ ‘কইসেঁ’ ইত্যাদি পুরাণ বাঙ্গালায় চলিত ছিল, কিন্তু তাহা হইতে উৎপন্ন কোন শব্দ এখন বাঙ্গালায় চলিত নাই, বরং নিকটবর্ত্তী ভাষায় চলিত আছে।

 এই সকল দেখিয়া পদকর্ত্তা কৃষ্ণপাদ বা কাহ্নুপাদের ভাষা বাঙ্গালা বলিতে কুণ্ঠিত হইবার কারণ দেখি না। চলিত বাঙ্গালার মধ্যে ‘ছিনালী,’ ‘জৌতুক,’ ‘টাল’ প্রভৃতি শব্দ বাঙ্গালায় খুব ব্যবহার হয়।

অলিএঁ কালিএঁ বাট রুন্ধেলা।
তা দেখি কাহ্নু বিমন ভইলা॥
কাহ্নু কহিঁ গই করিব নিবাস।
জো মন গোঅর সো উআস॥

* * * *
* * * *
জে জে আইলা তে তে গেলা।

অবণা গবণে কাহ্নু বিমন ভইঈলা॥ [পত্রাঙ্ক ১৪]

 কৃষ্ণাচার্য্য বা কাহ্নুপাদের বংশধরেরা অনেকেই বাঙ্গালায় গান ও দোঁহা লিখিয়া গিয়াছেন। ইঁহাদের মধ্যে সরহ, ধর্ম্মপাদ, ধেতন ও মহীপাদের বাঙ্গালা গান পাওয়া গিয়াছে।

৬। ধামপাদ বা ধর্ম্মপাদ

 ধামপাদের আর এক নাম গুণ্ডরীপাদ। মূল গানে ধামপাদ থাকিলেও পুথিতে তাঁহার গানের মাথায় তাঁহাকে গুণ্ডরীপাদ বলা হইয়াছে। তাঁহার গানের মধ্যে আমরা দুইটি পদ পাইয়াছি। এই দুইটিতে ৯২টি শব্দ আছে। তার মধ্যে ২১টি সংস্কৃত, ইহার মধ্যে একমাত্র ‘মণিকুল’ শব্দটি বৌদ্ধ, আর সবগুলিই বাঙ্গালায় চলিত আছে। সংস্কৃত হইতে উৎপন্ন ১৪টি শব্দ আছে। সে সকল শব্দ বাঙ্গালীর বুঝিবার কোন ক্লেশ হয় না, যথা,—ধুম = ধূম, ণবগুণ = নবগুণ, মুহ = মুখ, বাহ্ম = ব্রাহ্ম, সুজ = সূর্য্য ইত্যাদি; কেবল একটু বানানের পরিবর্ত্তন। ৪৪টি পুরাণ বাঙ্গাল কথা আছে, তার মধ্যে ‘কুন্দুরে’ একটি বৌদ্ধ শব্দ, বাকীগুলি পুরাণ বাঙ্গালায় পাওয়া যায়। তেরটি চলিত বাঙ্গালা, সবগুলি কথাবার্ত্তায় চলে। ধর্ম্মপাদের বাঙ্গালা বইএর নাম ‘সুগতদৃষ্টিগীতিকা’।

জোইনি তঁই বিনু খনহিঁ ন জীবমি।
তো মুহ চুম্বী কমলরস পীবমি॥  [পত্রাঙ্ক ৯]

 এইগুলিতে যেন বৈষ্ণব কবির ঝঙ্কার পাওয়া যায়।