১২। বিরূপ
ইনি সিদ্ধাচার্য্য ও যোগীশ্বর ছিলেন। ইনি বজ্রযান ও কালচক্রযানের পুস্তক লিখিয়াছেন। ইঁহার একখানি পুস্তকের নাম ‘ছিন্নমস্তাসাধন,’ আর একখানির নাম ‘রক্তযমারিসাধন’। ইঁহার চারখানি গানের বই আছে;—‘বিরূপগীতিকা,’ ‘বিরূপপদচতুরশীতি,’ ‘কর্ম্মচণ্ডালিকা-দোঁহাকোষগীতি,’ ‘বিরূপবজ্রগীতিকা’। ইঁহার একটি মাত্র গান পাইয়াছি; তাতে ৬টি সংস্কৃত শব্দ, ২টি সংস্কৃত হইতে উৎপন্ন, ১৯টি পুরাণ বাঙ্গালা ও ১২টি চলিত বাঙ্গালা কথা আছে। গানের নমুনা,—
এক সে শুণ্ডিনি দুই ঘরে সান্ধঅ।
চীঅণ বাকলঅ বারুণী বান্ধঅ॥
সহজে থির করী বারুণী সান্ধে।
জেঁ অজরামর হোই দিট কান্ধে॥
দশমি দুআরত চিহ্ন দেখইআ॥
আইল গরাহক অপণে বহিআ॥ [পত্রাঙ্ক ৭]
১৩। শান্তি
সিদ্ধাচার্য্য শান্তির আমরা দুইটি গান পাইয়াছি। তেঙ্গুরে অনেকগুলি শান্তির নাম আছে; তিনি যে কোন্ শান্তি, তা বলিতে পারি না। দশম শতকে রত্নাকরশান্তি নামে একজন দিগ্গজ পণ্ডিত ছিলেন, তিনি বিক্রমশীলবিহারের দ্বার রক্ষা করিতেন। তাঁহার অনেক পুস্তক আছে। ন্যায়শাস্ত্রের অতি গূঢ় কথা যে অন্তর্ব্যাপ্তি, তিনি তারও উপর বই লিখিয়া গিয়াছেন। বজ্রযান ও কালচক্রযানের উপর তাঁহার অনেক পুস্তক ছিল। সহজযানের উপরও তিনি ‘সহজরতিসংযোগ’ ও ‘সহজযোগক্রম’ নামে দুইখানা বই লিখিয়া গিয়াছেন। তিনি যদি আমাদের পদকর্ত্তা শান্তি হন, তবে পদকর্ত্তাদের মধ্যে আমরা আর একজন দিগ্গজ পণ্ডিত পাইলাম। ইনি যে রত্নাকরশান্তি, তাহা মনে করিবার কারণ এই যে, ‘সুখদুঃখদ্বয়পরিত্যাগদৃষ্টি’ নামে তেঙ্গুরে যে সহজযানের গ্রন্থের উল্লেখ দেখিতে পাই, তাতে সিদ্ধাচার্য্য শান্তিকেই রত্নাকরশান্তি বলা হইয়াছে। শান্তির দুইটি গানে অতি সহজ সংস্কৃত শব্দ ১৩টি, সংস্কৃত হইতে উৎপন্ন ১৯টি, প্রাচীন বাঙ্গালা ৫৫টি, আর চলিত বাঙ্গালা ১৩টি শব্দ আছে।
তুলা ধুণি ধুণি আঁসুরে আঁসু।
আঁসু ধুণি ধুণি ণিরবর সেসু॥
তউষে হেরুঅ ণ পাবিঅই।
সান্তি ভণই কিণ সভাবি অই॥
তুলা ধুণি ধুণি সুনে অহারিউ।
পুন লইআঁ অপণা চটারিউ॥