ও দোঁহা আছে; কারণ, আমি গাথা ও গীতির যে কয়খানি টীকা পাইয়াছি, তাহাতে কয়েক জন দোঁহা ও গীতিকারের নাম পাইয়াছি, যাহা এই দুইএর কোন সংগ্রহেই নাই। আর আমি নেপাল হইতে যে সমস্ত বৌদ্ধ বজ্রযান, সহজযান, কালচক্রযান ও মহাযানের পুস্তক আনিয়াছি, তাহাতেও মধ্যে মধ্যে বাঙ্গালা গীতি ও দোঁহা পাইয়াছি।
ডাকার্ণব
ডাকার্ণব নামে একখানি পুস্তকে অনেক চলিত ভাষার গান আছে। সে গানগুলি কি ভাষায়, তাহা স্থির করিতে না পারিয়া, আমি সেই অংশগুলি ছাপাইয়া ইউরোপে পাঠাইব স্থির করিয়াছি এবং ছাপাইয়াছি। কিন্তু যুদ্ধের জন্য পাঠাইতে পারিতেছি না। তাহারও শেষ দোঁহাগুলি আমার বাঙ্গালা বলিয়া মনে হয়।
রম রম পরম মহাসুখ বজ্জু।
প্রজ্ঞোপায়ই সিজ্জউ কজ্জু॥
লোঅণ করুনা ভাবহু তুম্ম।
সঅল সুরাসুর বুদ্ধহু জিম্ম॥
জরণ মরণ পড়িহাস ন দিসই।
ইবোহ করহু চিত্ত জিণ না হই॥ [পত্রাঙ্ক ১৬১-৬২]
ইহার উপর আরও একটা কথা বলিয়া রাখি। মীননাথের একটি বাঙ্গালা পদ পূর্ব্বে দেখাইয়াছি। আমাদের দেশে প্রবাদ আছে যে, মীন ও মৎস্যেন্দ্র চন্দ্রদ্বীপের লোক। চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়ের টীকায় বহিঃশাস্ত্রের বলিয়া আরও দুই একটি বাঙ্গালা পদ তুলিয়াছি। তাহাতে বোধ হয় যে, নাথপন্থের নাথদিগেরও অনেক গ্রন্থ বাঙ্গালায় লেখা হইয়াছিল।
নাথদিগকে সিদ্ধও বলিত, বর্ণনরত্নাকরে তাঁহাদের একটি তালিকা দেওয়া আছে। বর্ণনরত্নাকর এশিয়াটিক সোসাইটির একখানি তালপাতার পুথি, নং ৪৮।৩৪—অক্ষর বাঙ্গলা—লিপিকাল ল॰সং ৩৮৮। গ্রন্থকার কবিশেখরাচার্য্য জ্যোতিরীশ্বর, মিথিলার রাজা হরিসিংহদেবের সভার একজন কবি ছিলেন। হরিসিংহদেবের রাজত্বকাল খ্রীঃ অঃ ১৩০০—১৩২১।
পুস্তকে নানাবিধ বর্ণনা দেওয়া আছে; যথা:—
নগরবর্ণনো নাম প্রথমঃ কল্লোলঃ।
নায়িকাবর্ণনো নাম দ্বিতীয়ঃ কল্লোলঃ।
আস্থানবর্ণনো নাম তৃতীয়ঃ কল্লোলঃ।
ঋতুবর্ণনো নাম চতুর্থঃ কল্লোলঃ।
প্রয়াণবর্ণনো নাম পঞ্চমঃ কল্লোলঃ।
ভট্টাদিবর্ণনো নাম ষষ্ঠঃ কল্লোলঃ।
শ্মশানবর্ণনো নাম সপ্তমঃ কল্লোলঃ।