পাতা:বৌদ্ধধর্ম - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম


বৌদ্ধ কাহাকে বলে ?

বৌদ্ধ কাহাকে বলে, একথা লইয়া নানামুনির নানামত আছে। যাহারা সিংহলের বৌদ্ধধৰ্ম্ম দেখিয়া এবং পালি পুস্তক পড়িয়া সিদ্ধান্ত করিয়াছেন, তাহারা বলেন, যাহারা সংসার ত্যাগ করিয়া বিহারে বাস করেন, তাহারাই যথার্থ বৌদ্ধ। গৃহস্থবৌদ্ধদের তাঁহারা বৌদ্ধ বলিতে রাজী নহেন। তাহারা বলেন, ত্রিপিটকে যাহা কিছু ব্যবস্থা আছে, সবই বিহারবাসী ভিক্ষুদের জন্য। বিনয়পিটকে যত বিধিব্যবস্থা আছে, সবই ভিক্ষুসঙ্ঘের জন্য। গৃহস্থ বৌদ্ধ উপাসক উপাসিকাদের তাহাতে স্থান নাই। আবার কেহ কেহ বলেন, যাহারা “পঞ্চশীল” গ্রহণ করে অর্থাৎ “প্ৰাণাতিপাত করিব না”, “মিথ্যা কথা কহিব না", "চুরি করিব না”, “মদ খাইব না”, “ব্যাভিচার করিব না।”-এই পাঁচটি নিয়ম পালন করিবার জন্য প্ৰতিজ্ঞা করে, তাহারাও বৌদ্ধ। কিন্তু তাহা হইলে এক জায়গায় ঠেকিয়া যায়। যে সকল জাতি দিনরাত প্রাণিহিংসা করিয়া জীবনযাত্ৰা নির্বাহ করে, যথা জেলে, মালা, কৈবৰ্ত্ত, শিকারী, ব্যাধ, খোট, খটিক প্রভৃতি জাতির বৌদ্ধধৰ্ম্মে প্রবেশের অধিকার একেবারেই থাকে না ।
এদিকে আবার যাহারা নেপাল, তিব্বত প্ৰভৃতি স্থানের বৌদ্ধধৰ্ম্ম দেখিয়াছেন, তাহারা বলেন পৃথিবীশুদ্ধই বৌদ্ধ ; কারণ, যিনি বোধিসত্ত্ব হইবেন, তাহাকে জগৎ উদ্ধারের প্রতিজ্ঞা করিতে হইবে । লঙ্কাবাসীর মত আপনাকে উদ্ধার করিয়াই নিশ্চিন্ত থাকিলে চলিবে না। এই জন্য নেপাল ও তিব্বতবাসীরা লঙ্কাবাসী দিগকে হীনযান বৌদ্ধ বলেন এবং আপনাদিগকে মহাযান, বৌদ্ধ বলেন। এখানে ‘যান’ শব্দের অর্থ লইয়া অনেক বিবাদবিসম্বাদ আছে। ইউরোপীয় পণ্ডিতেরা কেহ কেহ উহার ইংরাজী করেন Vehicle অর্থাৎ গাড়ী ঘোড়া ইত্যাদি । কিন্তু বাস্তবিক বৌদ্ধদিগের মধ্যে ‘যান’ শব্দের অর্থ পন্হ বা মত ! আমরা যেমন এখন বলি নানকপন্হী দাদুপন্হী কবীরপন্হী, সেকালে বৌদ্ধেরা সেইরূপ বলিত শ্ৰাবকযান, প্ৰত্যেকযান, বােধিসত্ত্বযান, মন্ত্রযান Vehicle এর সহিত উহার কোন সম্পর্ক নাই। মহাযান