পাতা:বৌদ্ধধর্ম - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬

বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম

বৌদ্ধেরা আপনাদের বড় দেখাইবার জন্য আগেকার বৌদ্ধদিগকে হীনযানী বলিত, আর আপনাদিগকে বোধিসত্ত্বযান বলিত ।
মহাযানী বৌদ্ধেরা যদি জগৎই উদ্ধার করিতে বসিলেন, তবে জগৎশুদ্ধই ত বৌদ্ধ হইয়া উঠিল । তাহারা বলেন, 'আমরা বৈষ্ণব, শাক্ত, সৌর, গাণপত, পৌত্তলিক, রাজপূজক, ব্ৰাহ্মণপূজক প্রভৃতি সকলকেই উদ্ধার করিব' । কিন্তু সে উদ্ধারের পথ কি, সে কথা তাহারা স্পষ্ট করিয়া বলেন না ; এইমাত্ৰ বলেন, 'যাহার যাহাতে ভক্তি, আমরা সেইরূপ ধারণা করিয়া তাহাকে উদ্ধার করিব' । এ বিষয়ে কারণ্ডব্যূহে একটি দীর্ঘ প্ৰবন্ধ আছে। বুদ্ধদেব, বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন—"তুমি কি করিয়া জগৎ উদ্ধার করিবে ? জগতে তো নানামুনির নানামত, লোকে তোমার কথা শুনিবে কেন ?” তখন করুণামূৰ্ত্তি অবলোকিতেশ্বর বলিতেছেন,-“আমি বিষ্ণুবিনেয়দিগকে বিষ্ণুরূপে উদ্ধার করিব, শিববিনেয়দিগকে শিবরূপে উদ্ধার করিব, বিনায়কবিনেয়দিগকে বিনায়করূপে উদ্ধার করিব, রাজবিনায়কদিগকে রাজরূপে উদ্ধার করিব, রাজভটবিনোয়দিগকে রাজভটরূপে উদ্ধার করিব।” এরূপে তিনি যে কত দেবতার বিনেয়াদিগকে কতরূপে উদ্ধার করিবেন বলিয়াছেন, তাহা লিখিতে গেলে পুঁথি বাড়িয়া যায়, সেইজন্য উপরে তাঁহার কয়েকটিমাত্র দেওয়া হইল। এ মতে তাহা হইলে সকলেই বৌদ্ধ। এখন যেমন থিওজফিষ্ট মহাশয়েরা বলেন, “তোমরা যে ধৰ্ম্মেই থাক, যে দেবতার উপাসনাই কর, ধৰ্ম্মে এবং চরিত্রে বড় হইবার চেষ্টা করিলেই, তোমরা থিওজফিষ্ট এবং যে কেহ থিওজফিষ্ট হইতে পারে”। এও কতকটা সেইরূপ, তবে ইহাদের অপেক্ষা মহাযানী বৌদ্ধদের জগতের প্রতি করুণা কিছু বেশী ছিল। তাঁহারা নিজেই চেষ্টা করিয়া জগৎ উদ্ধার করিতে যাইতেন । তোমার চেষ্টা থাকুক, আর নাই থাকুক, তাহারা বলিতেন, “আমরা নিজগুণে তোমায় উদ্ধার করিব” । সেইজন্য মহাযান ধর্ম্মের সারের সার কথা “করুণা” । উহাদের প্রধান গ্রন্হের নাম “প্রজ্ঞাপারমিতা”। উহার নানারূপ সংস্করণ আছে ; এক সংস্করণ শত সহস্ৰ শ্লোকে, এক সংস্করণ পঁচিশ