পাতা:বৌদ্ধধর্ম - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম


সকলে বাড়ী ফিরিয়া আসিল । সেখানে সকলে ঝগড়া করিতে লাগিল । কেহ বলিল হাতী কুলার মত, কেহ বলিল হাতী নলের মত, কেহ বলিল হাতী উল্টা ধামী, কেহ বলিল হাতী বড় উঁচু, কেহ বলিল হাতী থামের মত, কেহ বলিল হাতী চামরের মত। সকলেই বলিতে লাগিল 'আমার মতই ঠিক' । সুতরাং ঝগড়া চলিতেই লাগিল, কোনরূপ মীমাংসা হইল না । বৌদ্ধধৰ্ম্মের ইতিহাস সম্বন্ধেও প্ৰায় সেইরূপই ঘটয়াছে। ইউরোপীয়েরা সিংহলদ্বীপেই প্ৰথম বৌদ্ধধৰ্ম্ম দেখেন ও সেইখানেই পালি শিখিয়া বৌদ্ধদের বই পড়িতে আরম্ভ করেন তাহারা বলেন, বৌদ্ধধৰ্ম্ম কেবল ধৰ্ম্মনীতির সমষ্টিমাত্র, উহাতে কেবল বলে, 'হিংসা করিও না,’‘মিথ্যা কথা কহিও না,’‘চুরি করিও না,’‘পরস্ত্রীগমন করিও না, মদ খাইও না।' হজসন সাহেব নেপালে বৌদ্ধধৰ্ম্ম পাইলেন। তিনি দেখিলেন, বৌদ্ধদের অনেক দর্শন গ্ৰন্থ আছে এবং তাহাদের দর্শন অতি গভীর । কেহ বা শুদ্ধ বিজ্ঞানবাদীমাত্ৰ, কেহ বা তাহাও বলেন না । যে সকল দর্শনের মত আঠার ও উনিশ শতে ইউরোপে প্ৰথম প্ৰকাশ হইয়াছিল, তিনি সেই সকল মত নেপালের পুঁথির মধ্যে পাইলেন এবং বুঝিতে পারিলেন যে, এ সকল মত বৌদ্ধদের মধ্যে দুই তিন শতে চলিতেছিল। বিশপ বিগাণ্ডেট ব্ৰহ্মদেশে বৌদ্ধধৰ্ম্ম দেখিতে পান। তিনি দেখেন, উহার আকার অন্যরূপ । উহাতে পূজাপাঠ ইত্যাদির বেশ ব্যবস্থা আছে। তিনি দেখেন, বৌদ্ধমঠমাত্রেই এক একটি পাঠশালা । ছোট ছোট ছেলেরা পড়ে । যিনি তিব্বত দেশের বৌদ্ধধৰ্ম্ম দেখিলেন, তিনি দেখিলেন, সেখানে কালীপূজা হয়, সেখানে মন্ত্রতন্ত্র আছে, হোমকু হয়, মানুষপূজা হয়। চীনদেশের বৌদ্ধধৰ্ম্ম আবার আর এক রূপ। তাহারা সব মাংস খায় সব জন্তু মারে ; অথচ বৌদ্ধ। জাপানীরা বলে, 'আমরা মহাযান অপেক্ষাও দার্শনিকমতে উপরে উঠিয়াছি।' অথচ আবার তাঁহাদের মধ্যে এক দল বৌদ্ধ আছে, তাহারা নানারূপ দেবদেবীর উপাসনা করে।
এইরূপে বৌদ্ধধৰ্ম্ম নানামুৰ্ত্তি ধারণ করিয়া রহিয়াছে ; কোথাও বা উহা পূৰ্বপুরুষে উপাসনার সহিত মিশিয়া গিয়াছে,