পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌদ্ধ-ভারত

তাহাদের ধ্যানধারণার কোনও প্রয়োজন নাই। বেদের ঋষি যে ভাবের প্রেরণায় মন্ত্রার্থ প্রত্যক্ষ করিয়া ভগবানের বন্দনা গান গাহিয়াছেন, সে ভাব সর্ব্বতোভাবে অন্তর্হিত হইল। মন্ত্রের আবৃত্তি, আয়োজনের অনাবশ্যক আড়ম্বর, ক‍্রিয়ার বাহল্য এবং অনুষ্ঠানের প্রকরণ ভাবের অভাব প্রকাশ করিতে লাগিল। ভাবের বিলোপের অনুপাতে কর্ম্মকাণ্ড বাড়িয়া উঠিতেছিল। কিন্ত‍ু মানুষের হৃদয় তাহা মানিতে চাহিবে কেন? মাননুষের চিত্ত আপনাআপনি বিদ্রোহী হইয়া উঠিল; প্রতিক্রিয়া সুর‍ু হইল। সত্য বটে, উপনিষদের ঋষিগণ বিশ্বব্যাপী দেবতার মহিমা ঘোষণা করিয়াছেন এবং নানা দর্শনশাস্ত্রে পণ্ডিতেরা দুর্ব্বোধ্য বাদানবাদের দ্বারা নানা ধর্ম্মতত্বের প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। কিন্তু, সেই উচ্চ ধর্ম্ম, সেই উচ্চ তত্ত্ব মুষ্টিমেয় লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হইয়াছিল। সাধারণ লোক তাহার খোঁজ রাখিত না, অথবা উহা ধারণা করা তাহাদের সাধ্যের অতীত ছিল। ফলে যে সকল ক্রিয়া কর্ম্মের উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় ও অর্থ তাহারা কিছুমাত্র বুঝিত না সেই সমস্তই তাহারা আচরণ করিত। কিন্তু বুদ্ধি দিয়া মানুষ যাহা করে না, সে তাহাতে সুখ পায় না এবং তাহার মন সেই অনাবশ্যক বোঝা ছুঁড়িয়া ফেলিবার জন্যই বিদ্রোহী হইয়া উঠে।

 সেই সুদূর অতীতকালে ভারতবর্ষে মানবচিত্ত একদা এমনই বিদ্রোহী হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। সাধকশ্রেষ্ঠ গৌতম বুদ্ধ এই বিদ্রোহীদের অন্যতম। লোকে তাঁহাকে বেদবিরোধী বলিয়া নাস্তিক আখ্যা দিল, তিনি সেই নিন্দার মুকুট পরিয়াই বিদ্রোহের পতাকা দৃঢ় হস্তে ধারণ করিলেন। তিনি উচ্চ তত্ত্ব ছাড়িয়া সোজা কথায় সত্য প্রচার করিয়া লোকের মন জয় করিয়া লইলেন। ছোটবড় সকলকে স্নেহকণ্ঠে নিজের কাছে ডাকিয়া ধর্ম্মের উদার ক্ষেত্র দেখাইয়াছিলেন। তিনি তত্ত্বও বলেন নাই, শাস্ত্রও বলেন নাই; বলিয়াছেন তাঁহার অন্তরের উপলব্ধ সহজ সত্য। তাহা অনাবৃত, অবিকৃত সত্য বলিয়াই সর্ব্বজনের গ্রহণযোগ্য। এই