জন্য তাঁহার ধর্ম্ম কতিপয় পণ্ডিতের ধর্ম্ম হইল না; সকল দেশের, সকল মানবের ধর্ম্ম হইল। ভারতবর্ষের চিত্ত বহুকাল পরে একটি অমৃত উৎসের রস পাইয়া সজীব হইয়া উঠিল।
এই প্রাণের ক্রিয়া সকল দিক দিয়া প্রকাশ পাইয়াছিল। একমাত্র ধর্ম্ম নহে— শিল্পে, বিজ্ঞানে, সাহিত্যে, স্থাপত্যে, সকল দিকেই দেশ উন্নত হইয়াছিল। গৌতমবুদ্ধ ইচ্ছাপর্ব্বক স্বয়ং একটি নূতন ধর্মস্থাপনের চেষ্টা পাইয়াছিলেন, এমন কথা যদি কেহ মনে করেন তিনি নিঃসন্দেহ ভুল করিবেন। তাঁহার অপূর্ব্ব জীবনের ইতিবৃত্ত পাঠ করিলে জানা যায় যে, তিনি এদেশের সকল শাস্ত্র, পঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করিয়াছেন, গুরূদের শরণাপন্ন হইয়া নানা সাধনার সহিত পরিচিত হইয়াছেন, শ্রেয়ের সন্ধানে দেশে দেশে, বনে, পর্ব্বতে ঘরিয়া বেড়াইয়াছেন। তাঁহার পূর্ব্বে আরও অনেকে এইরূপ পরিব্রাজকরূপে ধর্ম্মসাধনায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। হিন্দুশাস্ত্রকারগণ বুদ্ধের মতানুবর্ত্তীদের “শাক্য পুত্রীয় শ্রমণ” নাম দিয়া শাস্ত্রমধ্যে এক পার্শ্বে একট, ঠাঁই দিয়াছেন। ইহা হইতেই এ কথা বোঝা যায় যে, হিন্দু শাস্ত্রকারগণের মতেও গৌতমবুদ্ধ এমন কিছু অন্যায় করেন নাই যে, তাঁহাকে একান্ত উপেক্ষেনীয় বলিয়া তাঁহারা ত্যাগ করিতে পারেন। হয়তো শাস্ত্রকারগণের মতে বুদ্ধ নূতন কিছু করেন নাই। এক হিসাবে এ কথা মানিয়া লওয়া যায়। যেহেতু সহজ সত্য চিরকালই এক, কিন্তু সেই সহজ সত্যই মানুষ বারংবার ভুলিয়া যায়। বুদ্ধ সেই বিস্মৃত সত্য সরল হৃদয়স্পর্শী কথায় বলিয়াছেন। পুঞ্জীভূত ক্লিয়াকর্ম্মের আবর্জ্জনা উড়াইয়া দিয়া লোককে সত্যের উজ্জ্বল মূর্ত্তি দেখাইয়া দিয়াছেন। তিনি সমাজে, শাস্ত্রে, আচারে, অনুষ্ঠানে কোথাও সত্যের দেখা না পাইয়া পাগল হইয়া সত্যরত্ন উদ্ধারের জন্য সখভোগ, রাজৈশ্বর্য্য ত্যাগ করিয়াছিলেন এবং সত্যধন লাভ করিয়াই বদ্ধ হইয়াছিলেন।
অনুগামী শিষ্যদের কাছে তিনি তাঁহার সত্যসাধনার এই