পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় অধ্যায়
১৩

সাধনা ত্যাগ করিয়া তিনি নিয়মিত পানাহারে প্রবৃত্ত হইলেন, শিষ্যেরা তখন তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়া ঋষিপত্তনে গমন করেন।

 শিষ্যেরা বিমুখ হইয়া গুরুকে ছাড়িয়াছিলেন বটে, গুরু কিন্তু অমৃতমণ্ড পান করিয়া তাহা একাকী গোপনে সম্ভোগ করিতে পারিলেন না,—ক্ষুধার্ত্ত শিষ্যদের সন্ধানে ঋষিপত্তনে আসিলেন। অনন্যসুলভ মহিমায় মণ্ডিত হইয়া তিনি অমৃত পরিবেশনের নিমিত্ত শিষ্যদের সম্মুখে এমনভাবে আসিয়া উপস্থিত হইলেন যে, মহূর্ত্তমধ্যে তাঁহাদের মনের অবিশ্বাস ও অশ্রদ্ধা শূন্যে মিলাইয়া গেল। তাঁহারা বুদ্ধকে ও ধর্ম্মকে স্বীকার করিয়া নবধর্ম্মের আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। সত্যের পতাকা হস্তে এই যে পঞ্চ বীর সর্ব্বপ্রথমে বুদ্ধের পার্শ্বে দাঁড়াইয়াছিলেন, ইহাদের নাম কোল্ডাঞ্‌ঞ (কৌণ্ডিণ্য), ভদ্দীয় (ভদ্রীয়), বাপ্পা (বাষ্প), মহানাম ও অশ্বজি (অশ্বজিৎ)।

 এই পাঁচটি সত্যানুরাগী সাধককে লইয়া বুদ্ধের আশ্রয়ে আপনা-আপনি যে মণ্ডলীর সূত্রপাত হইল, সেই মণ্ডলীটি একটু বাড়িয়া উঠিয়াই “সংঘ” নাম ধারণ করিল। কোন্ সূত্র অবলম্বন করিয়া দানা বাঁধিয়া এই দলটি মূর্ত্তি পরিগ্রহ করিল? মহাপরুষের অন্তর্নিহিত অপার প্রেমই নিঃসন্দেহে এই মিলনের সূত্র। এই প্রেমিক মহাত্মার মধুর ব্যবহারে, মধুর বাক্যে মুগ্ধ হইয়াই, অনাগত শিষ্যেরা পরম সুখে নির্ব্বাণলাভের সাধনা গ্রহণ করিয়াছিলেন।

 সংঘের উদ্ভবকালে বুদ্ধের শিষ্যেরা যাঁহাকে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনি প্রেমবান্ ও মহাপ্রাণ শিক্ষক;—শুষ্ক শাস্ত্র কিংবা বিশুদ্ধ জ্ঞান নহেন। নির্ব্বাণপ্রাপ্ত ব্যক্তির বাণী কি, ব্যবহার কি, মাননুষের সহিত এবং সমাজের সহিত তাঁহার সম্পর্ক কি, লোকশিক্ষক বুদ্ধ এই সকল প্রশ্নের মূর্ত্তিমান সমাধান ছিলেন।

 নির্ব্বানের সুখ কি গভীর, কেমন পরিপূর্ণ—তাহা বুদ্ধের