জীবনে একান্ত সুস্পষ্টরূপে অভিব্যক্ত হইয়াছে। দেশদেশান্তরের সমস্ত প্রাণীর প্রতি তাঁহার হৃদয়ের যে অসীম করুণা ছিল, সেই করুণাই তাঁহাকে মহাসাধনায় প্রবৃত্ত করিয়াছিল। “সকলের দুঃখ দূর হউক, সকলে সুখী হউক” ইহাই তাঁহার সাধনার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। জ্ঞানানলে তিনি অবিদ্যা ভস্মীভূত করিয়াই সিদ্ধিলাভ করিয়াছিলেন এমন নহে; “জগতের সকল জীব সুখী হউক” এই মৈত্রীভাবনার দ্বারা তাঁহার অন্তরবাহির নিঃসন্দেহ প্রেমের পণ্যজ্যোতিঃতে উদ্ভাসিত হইয়াছিল। সাধন-সংগ্রামে এই মৈত্রীবলেই তিনি জয় লাভ করিয়া অমৃত লাভ করিয়াছিলেন।
“মৈত্রী বলেন জিত্বা পীতো মেহম্মিন্নমৃতমণ্ড”। বিনয়পিটকে মহাবগ্গে বোধিলাভের পরে মহাপুরুষ বুদ্ধ তাঁহার নবলব্ধ মহাসত্য কিরূপে সম্ভোগ করিলেন, তাঁহার কিঞ্চিৎ বিবরণ পাওয়া যায়। প্রথমতঃ সপ্তাহকাল তিনি বেধিদ্রুমমূলে বিমুক্তি সুখ অনুভব করিলেন। দ্বিতীয় সপ্তাহও অজপালের ন্যগ্রোধতরুতলে মুক্তির বিমল আনন্দসম্ভোগে যাপন করিলেন। তৃতীয় সপ্তাহে মুচলিন্দতরুমূলে তিনি তাঁহার আনন্দ অমৃতময়ী বাণী ব্যক্ত করিয়া কহিলেন—“যিনি সকল বিষয়ে সন্তুষ্ট, ধর্ম্মজ্ঞাত, যিনি সত্যের সাক্ষাৎকার লাভ করিয়াছেন তাঁহার বিবেক সুখকর। সর্ব্বভূতে মৈত্রী ও অহিংসা সুখকর। এই পৃথিবীতে অনাসক্তি ও কামনাহীনতা সুখকর। কিন্তু, অহংবোধের বিলোপই পরমসুখ।”[১] এই উদানটির মধ্যে ভগবান্ বুদ্ধ তাঁহার সাধনার সংক্ষিপ্ত বিবরণই বলিয়া থাকিবেন। তিনি যে সত্যলাভ
- ↑
সুখো বিবেকো তুট্ঠস্স, সুতধম্মস্স পস্সতো,
অব্যাপজ কং সুখং লোকে পাণভূতেসু সংযমো।
সুখা বিরাগতা লোকে কামানং সমতিক্কমো,
অগ্নিমানস্স যো বিনয়ো এতং বে পরমং সুখং। (মহাবগ্গ)