পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় অধ্যায়
১৭

তাঁহার নবলব্ধ সত্যপ্রচারের জন্য লোকসমাজে আসিয়া উপস্থিত হইলেন, তখন তাঁহার চারিদিকে ধীরে ধীরে দল জমিয়া উঠিয়াছিল। তাঁহার সঙ্গ, তাঁহার চরিত্র, তাহার বাণী মনুষ্যকে নিঃসন্দেহ অতুল আনন্দ দান করিয়াছিল। আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, তিনি মানুষের কাছে ঈশ্বরের নাম করেন নাই, আত্মাপরমাত্মার জটিল তত্ত্বকে তিনি একেবারে আমলই দিলেন না, অতি-প্রাকৃত কোনো-কিছুর কথা কহিলেন না; অথচ ছোটবড়, উচ্চ-নীচ সকলেই তাঁহার ধর্ম্ম ও সংঘ আগ্রহসহকারে স্বীকার করিল।

 সংঘের আদিম শিষ্যেরা তাঁহার কাছে কি পাইলেন? যাহা পাইলেন তাহা আর যাহাই হউক “শূন্য” নহে, “না” নহে। তাহা আশা আনন্দ, তাহা অভয় ও অশোক। শিষ্যেরা যাহা পাইলেন তাহা অনির্ব্বচনীয়; এবং তাহা এমন যাহার জন্য তাঁহারা অনায়াসে সাংসারিক সুখভোগ বর্জ্জন করিতে পারিয়াছিলেন! ঋষিরা যাহাকে বাক্যের মনের অগোচর বলিয়াছেন, সেই পরম সত্য মহাপুরুষ বুদ্ধের স্তব্ধ-শান্ত উপলব্ধির গোচর হইয়াছিল। এই সত্য লাভ করিয়াছিলেন বলিয়া তিনি বলিতে পারিয়াছেন, “অমৃতের দুয়ার খুলিয়া গিয়াছে” এবং পৃথিবীর নরনারী এই অমৃতের জন্যই তাঁহার ধর্ম্ম বরণ করিয়াছে!

 মহাপুরুষেরা মানবজাতির হৃদয়-সরোবরের প্রস্ফুটিত শ্বেত শতদল। তাঁহারা অম্লান জ্যোতিঃতে মানবহৃদয়ে নিত্যকাল বিরাজ করিতেছেন। মানুষের মনো-ভ্রমর গন্ধ, বর্ণ, মধুলোভে উন্মত্ত হইয়া এই কমলই আশ্রয় করিয়া থাকে। মহাপুরুষ বুদ্ধ সকল মানবের এমনই আশ্রয়স্থল ছিলেন। সিংহলী কবি মেধাঙ্কর তাঁহার “জিনচরিত” গ্রন্থে এই মহাপুরুষকে “নিব্বানমধুদং” বলিয়াই প্রণাম নিবেদন করিয়াছেন।

 এই নির্ব্বাণমধুলাভ করিবার জন্য ভিক্ষুকে সকল জীবের সুখ