বিহার, বেশভূষা প্রভৃতি সকল বিষয়ের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম খুঁটিনাটি এমন বিস্তৃত-ভাবে আলোচিত হইয়াছে যে, সেগুলি কেহ বাহুল্য মনে করিতে পারেন। সংঘের যখন উদ্ভব হইয়াছিল, সেই সুদূর অতীতকালের সহিত আমাদের ঐতিহাসিক যোগসূত্র এমন ছিন্ন হইয়া গিয়াছে যে, এখন আমরা সকল কথা কিছুতেই বঝিতে পারিব না। তবে এ কথা নিশ্চিত যে, প্রাচীন বৌদ্ধ সংঘের মধ্যে সভ্যতার এমন একটি উজ্জ্বল ছবি দৃষ্ট হয় যে, সে ছবির গৌরব কখনো ম্লান হইবে না।
নির্ব্বাণ বা মুক্তিলাভের বাসনা ছোটবড় পণ্ডিত-মূর্খ সাধু-অসাধু, ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল, আর্য্য-অনার্য্য সকলের মনেই স্বভাবতঃ জাগিয়া থাকে। বুদ্ধ এই জন্য সাধনার পথটি এমন সুনির্দ্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন যে, সেখানে কাহাকেও অন্ধকারে হাত্ড়াইতে হইবে না। তিনি স্বয়ং যাহাদের কাছে ধর্ম্মব্যাখা করিয়াছেন তাহাদের অধিকাংশই অনার্য্য ও অশিক্ষিত। সুতরাং তিনি সোজা কথা, সাধারণের ভাষায় সরস আখ্যান সৃষ্টি করিয়া, শিষ্যদিগকে শিক্ষা দিয়াছেন। শিষ্যেরা যাহাতে কথাগুলি মনে রাখিতে পারে, সেইজন্য তিনি এককথার পুনরুক্তি করিতেও দ্বিধা মনে করেন নাই। এই পুনরুক্তি সুপণ্ডিত ব্যক্তির পক্ষে অনাবশ্যক হইতে পারে কিন্তু শাস্ত্রজ্ঞানহীন সাধারণ শ্রোতার কাছে তাহা অত্যাবশ্যক ছিল। সংঘে প্রবেশের দ্বার খুলিয়া দিয়া তিনি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিমাত্রকেই আহ্বান করিলেন। সে আহ্বান যাহাদের মর্ম্ম স্পর্শ করিয়াছিল, তাহারা শোকেতাপে জর্জ্জরিত বলিয়াই তাঁহার শরণাপন্ন হইয়াছিল। সংসার ত্যাগ করিয়া সঙ্ঘে প্রবেশাধিকার পাইলেই, কেহ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহের হাত এড়াইলেন এমন হইতেই পারে না। তাঁহাকে প্রত্যেক মহূর্ত্তে এই সকলের সহিত সংগ্রাম করিয়া সাধনপথে অগ্রসর হইতে হয়। সাধনার প্রভাবে একদিন বিষয়বাসনা সংযত করিয়া তিনি উপশান্ত হইবেন সন্দেহ নাই। সে দিন তাঁহার দেহ শান্ত, বাক্য শান্ত ও চিত্ত শান্ত হইবে।
কিন্তু এই বাঞ্ছিত জীবনলাভের পূর্ব্বে সংঘের ভিক্ষু সাধারণ