পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
বৌদ্ধ-ভারত

মঙ্গল এবং চিরকাল মঙ্গল, যাহা একজনের মঙ্গল এবং সকলের মঙ্গল, তাহাই প্রকৃত মঙ্গল। মঙ্গল কি তাহা বুঝিবার জন্য কাহাকেও ক্লেশ স্বীকার করিতে হয় না, সাধারণ সোজা বুদ্ধি দিয়াই তাহা বেশ বুঝিতে পারা যায়। ভগবান্ বুদ্ধ এই মঙ্গলকেই প্রকাশ ও প্রচার করিয়াছেন বলিয়া মানুষের সাধারণ বুদ্ধি তাঁহার ধর্ম্মকে স্বীকার করিতে কোনপ্রকার বাধা অনুভব করে নাই।

 বৌদ্ধ সঙ্ঘে শ্রমণ ও শ্রামণেরদিগকে এত যে বিধিনিয়ম মানিয়া চলিতে হয় সেখানেও দেখা যায় যে, সেই বিধিনিয়মগুলির দ্বারা মঙ্গলশ্রী পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়া থাকে। ভাল হইয়া উঠিবার জন্য মানুষকে স্বেচ্ছায় যাহা মানিতে হয় [“প্রাণী বধ করিব না,” “ব্যভিচার করিব না,” “মিথ্যা কহিব না,” “সরাপান করিব না” ইত্যাদি] শীলগুলি তেমই সহজবিধি। অথচ প্রাত্যহিক জীবনে মানুষ এই সোজা কথাগুলি ভুলিয়া যায়। এইজন্য এই সোজা নীতিগুলিও বারংবার স্মরণ করিবার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে। সুতরাং এই শীলগুলি মানিয়া চলিলে কাহারো স্বাধীনতা খর্ব্ব হইতে পারে না, পরন্তু, ব্যক্তিগত স্বেছাচার দূর হইলে সকল মানুষের সহিত প্রীতির সম্বন্ধ স্থাপিত হইবার কথা।

 সাধনার ক্ষেত্রে বৌদ্ধ সাধকের স্বাধীনতা কোনদিকে বিন্দুমাত্র খর্ব্ব হয় নাই—কারণ তিনি আপনি আপনার অবলম্বন এবং আপনার বীর্য্যকে ও শক্তিকে জাগাইয়া তুলিয়া তিনি আপন অধ্যবসায় বলেই নির্ব্বাণলাভ করেন। সঙ্ঘের মধ্যেও এই স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রহিয়াছে। প্রবীণ নবীন ভিক্ষুদিগের প্রতিপাল্য নিয়মের যতই বাহুল্য থাকুক না কেন সেখানেও মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি অসামান্য শ্রদ্ধাই দেখানো হইয়াছে। সঙ্ঘের নিম্নতম নবীন ভিক্ষুও কোন কারণে অনাদৃত হইতেন না। প্রত্যেক ভিক্ষুর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই বিধি হইয়াছে—

 (১) কোন ভিক্ষু ঈর্ষা বা ক্রোধের বশবর্ত্তী হইয়া অন্য কোন দোষ অযথা আরোপ করিলে অপরাধী হইবেন।