পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় অধ্যায়
২৯

করিবার রীতি দেখা যায়; প্রাচীন বৌদ্ধ সঙ্ঘে সেইরূপ সম্বহুলতার বিচার প্রণালী প্রবর্ত্তিত ছিল। বিচারের জন্য ভিক্ষুরা ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের শলাকা ব্যবহার করিতেন এবং শলাকা গণনা দ্বারাই মতবাহল্য নির্ণীত হইত।

 কখন কোনো জটিল প্রশ্নের মীমাংসার জন্য সঙ্ঘের ভিক্ষুদিগের মত গ্রহণের প্রয়োজন উপস্থিত হইলে, তখন ভিক্ষুদের মধ্যে কোন সুযোগ্য ব্যক্তি যথারীতি প্রস্তাবিত, অনুমোদিত হইয়া শলাকা-গ্রহীতা বিচারপতি মনোনীত হইতেন। যিনি অপক্ষপাত, অদ্বেষ্টা, বুদ্ধিমান ও নির্ভীক নহেন তিনি কদাচ এমন সম্মানজনক পদ লাভ করিতে পারিতেন না। ভিক্ষুরা সাধারণতঃ মৌনাবলম্বন দ্বারাই সম্মতি জানাইতেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের এই বিচার প্রণালী আলোচনা করিলে স্পষ্টই বোঝা যায় যে, তাহারা কাহারো ব্যক্তিগত মতকে উপেক্ষা করিতেন না। সঙ্ঘের সর্ব্ববিধ সাধারণ প্রশ্নের সহিত প্রত্যেকে ভিক্ষুর ব্যক্তিগত যে যোগ ছিল সেই যোগ সাম্য ও স্বাধীনতারই পরিচায়ক। এই যোগ স্বেচ্ছায় ছিন্ন করিবার সাধ্য কাহারো ছিল না। পরন্তু, এই স্বেচ্ছাচার অপরাধ বলিয়াই গণ্য হইত। এই জন্যই বিধি হইয়াছে:

 (১) সঙ্ঘ যখন কোনো বিষয়ের মীমাংসায় প্রবৃত্ত আছেন তখন আপনার মত প্রকাশ না করিয়া কোন ভিক্ষু চলিয়া যাইতে পারিবেন না।

 (২) কোনো কার্য্যের আরম্ভকালে সম্মতি দিয়া কোন ভিক্ষু পরে ঐ কার্য্যের আর আপত্তি করিতে পারিবেন না।

 (৩) সঙ্ঘ কোনো বিষয়ের যে মীমাংসা করিয়াছেন কোনো ভিক্ষু সেই মীমাংসার বিরুদ্ধে আন্দোলন তুলিতে পারিবেন না।

 সামাজিক বাধা তুলিয়া দিয়া উচ্চনীচ আর্য্য অনার্য্য সকলে মিলিত হইয়া বুদ্ধের পবিত্র ধর্ম্মের আশ্রয়ে সঙ্ঘমধ্যে যে আশ্চর্য্য সভ্যতার সৃষ্টি করিয়াছিল এক সময়ে সমস্ত ভারতবর্ষ তাহার সুফল লাভ করিয়া কৃতার্থ হইয়াছিল।