সম্বোধন করিয়া বলিয়াছিলেন—"আনন্দ, সংঘ আমার কাছে কি প্রত্যাশা করিয়া থাকেন? আমি অকপটে সকলের কাছে আমার উপলব্ধ সত্য ব্যাখ্যা করিয়াছি, কোনো কথাই তো গোপন করি নাই। আমি কখনো এ কথা মনে করি না যে, আমি সংঘের চালক অথবা সংঘ আমার অধীন। যদি কেহ এমন মনে করেন, তিনি নেতার আসন গ্রহণ করিয়া সংঘকে দৃঢ়রূপে বাঁধিবার নিয়ম প্রণালী প্রণয়ন করুন। সংঘ রক্ষার জন্য আমি কোনো বাঁধা নিয়ম প্রণালী রাখিয়া যাইতে ইচ্ছা করি না।”
মহাপুরুষ বুদ্ধের এই উক্তি অতি সুস্পষ্ট। সংঘের স্বাভাবিক বৃদ্ধির পথে অন্তরায় হইয়া তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে কখনো আপনার অধীন করিতে চাহেন নাই। তাঁহার প্রেম ও সাধনায় সংঘ সৃষ্ট হইলেও তিনি অন্ধ স্নেহেব বশবর্ত্তী হইয়া শিশুটিকে একান্তভাবে আপনি কোলে আঁক্ড়াইয়া ধরিলেন না; পরন্তু তাঁহাকে মুক্তির অবারিত প্রান্তরে ছাড়িয়া দিলেন। সেখানে শ্রদ্ধাশীল শ্রাবক ও ভিক্ষুদের স্নেহরস পান করিয়া শিশু আনন্দে বাড়িতেছিল। এইরূপ স্বাধীনভাবে বাড়িতে পাইয়াছিল বলিয়াই এক সময়ে সংঘ ভারতব্যাপী সুবৃহৎ প্রতিষ্ঠান হইয়া উঠিয়াছিল। এই সৃষ্টিব্যাপারে বুদ্ধের কৃতিত্ব ও মহিমা তো আছেই; ভিক্ষুদের ও লোক সাধারণের সহানুভূতি ও সংস্রব সুস্পষ্ট দেখা যাইয়া থাকে।
বৌদ্ধ বিহারে যে সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়াছিল সেই সভ্যতা বৌদ্ধসাধুদিগের ও তদানীন্তন জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষিত বস্তু সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। বৃহৎ বনষ্পতির ন্যায় সংঘ অতি ক্ষীণ প্রারম্ভ হইতে ধীরে ধীরে মহৎ পরিণামের দিকে অগ্রসর হইতেছিল। সংঘের নিয়মাবলী প্রয়োজনের তাগিদে এইরূপ হইয়া উঠিয়াছে। ইহা ব্যক্তি বিশেষের সৃষ্টি নহে, অথবা কোনো স্থানে নির্দ্ধারিত হয় নাই। নিয়মগুলি সমাজের ও সংঘের মধ্যে আলোচিত হইয়া সাধারণ ভাবে গৃহীত হইত। লোকের দাবী,