সুখ-সুবিধা প্রয়োজনাদির প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া নিয়ম প্রণীত ও প্রবর্ত্তিত হইয়াছে।
মহাবগ্গে “সাদ্ধিবিহারিকের” কর্ত্তব্য বিস্তারিত বর্ণিত আছে। নবীন ভিক্ষু অপর কোনো প্রবীণ ভিক্ষুকে উপাধ্যায় বরণ করিয়া তাঁহারই উপদেশানুসারে জীবন যাপন করিবেন, এইরূপ নিয়ম আছে। উক্ত নবীন ভিক্ষু স্থবিরের সহিত একই বিহারে বাস করেন বলিয়া তাঁহাকে সার্দ্ধবিহারী বা ‘সাদ্ধিবিহারিক’ বলা হয়। এইরূপ উপাধ্যায়-বরণ-প্রথা প্রথমে ছিল না। দেখা গিয়াছিল, নবীন ভিক্ষুরা জনপদে যাইবার সময়ে যথোচিত বহির্ব্বাস পরিধান করেন না, উচ্ছিষ্ট পাত্রে অন্যের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য গ্রহণ করিয়া আহার করেন, ভোজন সময়ে ভোজনগৃহে —“ভাত চাই, ঝোল চাই” বলিয়া চীৎকার করেন।
তাহাদের এই অশিষ্ট ব্যবহারে জনপদবাসীরা উত্যক্ত হইত। এইরূপ ব্যবহারের কথা পরস্পর বলাবলি করিত এবং লোকে ক্রুদ্ধ হইয়া বলিত, “এ কেমন ব্যাপার, শাক্যপুত্রীয় শ্রমণেরা এমন অভদ্র বেশে লোকালয়ে ভিক্ষায় আসিয়া থাকেন? তাঁহারা ভোজন সময়ে ভোজনালয়ে এমন কোলাহল করেন কেমন করিয়া?”
জনপদবাসীদের এই সকল কথা মিতাচার, বিনীত ও বুদ্ধিমান্ ভিক্ষুদের কানে গেল। তাঁহাদের মধ্যেও এই সকল কথার আলোচনা হইল। তাঁহারা এই অভিযোগের কথা ভগবান্ বুদ্ধকে নিবেদন করিলেন। তিনি অর্ব্বাচীন ভিক্ষুদিগকে তিরস্কার করিয়া কহিলেন—“তোমাদের এমন ব্যবহার করা একান্ত অসঙ্গত, এরূপ করিলে লোকে এই ধর্ম্মে আশ্রয় গ্রহণ করিতে চাহিবে না। পরন্তু যাহারা এই ধর্ম্ম গ্রহণ করিয়াছে তাহারাও শ্রদ্ধা হারাইয়া এই ধর্ম্মের আশ্রয় হইতে সরিয়া পড়িবে। এই উপলক্ষে তিনি ভিক্ষুদিগকে একটি ধর্ম্মোপদেশ দিয়া বুঝাইয়া দিলেন যে, নির্ব্বাণের শান্তি, সংযমের দ্বারাই লভ্য, শিষ্টতার দ্বারাই লভ্য এবং বীর্য্যের দ্বারাই লভ্য।