নবধর্ম প্রচার যাত্রায় বাহির হইয়া ভগবান্ বুদ্ধ কপিলবাস্তু নগরে গমন করিয়াছিলেন। তাঁহার বৃদ্ধ পিতা তখন জীবিত ছিলেন। এই নগরের বহুলোক নবধর্ম্ম গ্রহণ করিলেন। এই সময়ে তাঁহার পিতৃব্যপুত্ত্র আনন্দ নবধর্ম্মে দীক্ষিত হইয়া তাঁহার উপস্থায়ক হইলেন। আনন্দ মনোপ্রাণে ভগবান্ বুদ্ধের সেবা করিতেন, তিনি তাঁহার দক্ষিণ বাহুবৎ সর্ব্বদা সঙ্গে সঙ্গে থাকিতেন। আনন্দ তাঁহার আজ্ঞাপালনের নিমিত্ত সর্ব্বদা এমনভাবে সতর্ক থাকিতেন যে, তাঁহাকে কদাচ দ্বিতীয় আহ্বান করিবার প্রয়োজন হইত না।
আনন্দের অনুরোধে বুদ্ধ নারীদিগকে সন্ন্যাস-দানে সম্মত হইয়াছিলেন। বিমাতা মহাপ্রজাবতী গৌতমী সর্ব্বপ্রথমে ভিক্ষুণী হইলেন। বুদ্ধের পত্নী যশোধরাও বৌদ্ধধর্ম্মে দীক্ষা পাইয়াছিলেন। পুত্ত্র রাহলও নবধর্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন।
ধর্ম্মচক্র প্রবর্ত্তনের পরে ভগবান্ বুদ্ধ প্রায় ৪৫ বৎসর জীবিত ছিলেন। শেষ জীবনে তিনি বৈশালী ও উহার নিকটবর্ত্তীস্থানে ধর্ম্ম প্রচার করেন। এই সময়ে তাঁহার স্বাস্থ্য ভগ্নপ্রায় হইয়াছিল। পাবার চুন্দ নামক এক অনুরাগী শিষ্যের আম্রকাননে বাস করিয়া তিনি কিছু দিন ধর্ম্ম প্রচার করিতেছিলেন। চুন্দ একদিন তাঁহাকে ভোজন করাইয়াছিলেন। উহার পরে তাঁহার রক্তামাশয় রোগ জন্মে। অসুস্থ দেহেই তিনি কুশী নগরে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে একস্থলে তিনি ক্লান্ত হইয়া পড়েন। আনন্দ তাঁহাকে শীতল নির্ম্মল জল পান করাইয়া সুস্থ করেন। অতঃপর তিনি শিষ্যগণসহ হিরণ্যবতী নদীর তীরবর্ত্তী কুশী নগরের উপকণ্ঠে মল্লদের শালবনে গমন করেন। এই উদ্যানেই তিনি পরিনির্ব্বাণ লাভ করেন। মৃত্যুশয্যায় তিনি আনন্দকে বলিয়াছিলেন,—“হে আনন্দ, আমার মৃত্যুর পরে আমার প্রবর্ত্তিত ধর্ম্মই তোমাদের চালক হইবে।”
বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে মহাপুরুষ বুদ্ধ পরিনির্ব্বাণ লাভ করেন। তাঁহার অস্থি প্রভৃতি দেহ-ধাতু গ্রহণের জন্য আট রাজ্য হইতে প্রতিনিধিগণ কুশীনগরে আগমন করিয়াছিলেন। দেহধাতুর বিভাগ