পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
বৌদ্ধ-ভারত

বলিয়াছেন, কতিপয় মধ্যস্থের উপর বিচার ভার অর্পণ করিয়া সঙ্ঘ এই বিষয়ের মীমাংসা করুন।”

 উভয় পক্ষের চারিজন করিয়া আটজন মধ্যস্থের উপর বিচারকার্য্য অর্পিত হইল। মধ্যস্থগণ সকলে একমত হইয়া বৈশালীর ভিক্ষুগণকে দোষী সাব্যস্ত করিলেন।

 খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৩৭৭ অব্দে বৈশালীতে এই মহাসমিতির অধিবেশন হইয়াছিল। এই সভায় সাত শত প্রসিদ্ধ ভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন। বৈশালীর ভিক্ষুদের দাবী অসঙ্গত প্রতিপন্ন হইল, কিন্তু উভয়পক্ষ মধ্যস্থদের মীমাংসা গ্রহণ করিলেন না। এই সময় হইতে নেপাল, তিব্বত, চীন প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধগণ ‘মহাসাঙ্ঘিক’ এবং সিংহল, ব্রহ্ম ও শ্যাম প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধগণ ‘থেরবাদী’ আখ্যা প্রাপ্ত হইলেন। পরে মহাসাঙ্ঘিকেরা “মহাযান” এবং থেরবাদীরা ‘হীনযান’ নামে পরিচিত হন।

 বৌদ্ধধর্ম্মে জাতিভেদ ছিল না. এই ধর্ম্ম ব্রাহ্মণকে উচ্চবর্ণের নিমিত্ত বংশ গৌরব দান করিত না। এইজন্য মগধের অনার্য্যগণই প্রথমতঃ দলে দলে দলে এই ধর্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিল। যে সকল দেশের অধিবাসীদের অধিকাংশই আর্য্য সেই সকল দেশে প্রথমে বৌদ্ধধর্ম্ম তেমন অনায়াসে প্রাধান্য লাভ করিতে পারে নাই।

 কোন ধর্ম্ম যতই উচ্চ হউক না কেন, কতগুলি অনুকূল বাহ্য কারণ না ঘটিলে ঐ ধর্ম্ম লোকমধ্যে ব্যাপ্তি লাভ করিতে পারে না। বুদ্ধের জীবিত কালে মগধরাজ বিম্বিসার ও অজাতশত্রু নূতন ধর্ম্মে অনুরাগী হইয়াছিলেন কিন্তু তাঁহারা তেমন শক্তিমান্ ছিলেন না, আপনাদের নাতিবৃহৎ রাজ্যের বাহিরে তাঁহাদের কোনো প্রভুত্ব ছিল না। খৃষ্টপূর্ব্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মগধ রাজ্য যখন ভারতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হইল তখন রাজশক্তির পৃষ্ঠ পোষণে বৌদ্ধধর্ম্ম ভারতের ধর্ম্মে পরিণত হইয়াছিল।

 মহারাজ অশোকের পিতামহ মগধরাজ্য চন্দ্রগুপ্ত গ্রীকদের অধীনতাপাশ হইতে ভারতবর্ষকে মুক্ত করিয়া কীর্ত্তিমান হইয়াছিলেন। নর্ম্মদা নদী হইতে আরম্ভ করিয়া হিমালয় ও হিন্দুকুশ