পর্ব্বত পর্য্যন্ত সমগ্র উত্তর ভারত তাঁহার শাসনাধীন হইয়াছিল। গ্রীকবীর সেলুকস্ তাঁহার সহিত যুদ্ধে পরাজিত হইয়া তাঁহাকে গ্রীক শাসনাধীন পঞ্জাব ও কাবুল প্রদান করেন। বিজয়ী ভারতীয় বীরের সহিত তিনি স্বীয় দুহিতাকে বিবাহ দিয়া তাঁহার সহিত মৈত্রী স্থাপন করিয়াছিলেন। সেই প্রাচীনকালে হিন্দু ও গ্রীক উভয় জাতিই সুসভ্য ছিলেন, সুতরাং এই দুই জাতির মিত্রতা উভয় জাতির পক্ষেই কল্যাণকর হইয়াছিল। গ্রীকেরা ভারতীয়দের নানাবিদ্যা এবং হিন্দুরা গ্রীকদের জ্যোতিষ ও গণিত প্রভৃতি শিক্ষা করিবার সুযোগ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। গ্রীকদূত মেগাস্থিনিস্ চন্দ্রগুপ্তের রাজধানী পাটলীপুত্র নগরে বাস করিতেন। তাঁহার ভারত-বিবরণে সেই সময়ের বহু ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। ভারতবর্ষ তখন ১১৮টি ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল। চন্দ্রগুপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রাজাদিগকে পরাস্ত করিয়া ভারতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ভূপতি হইয়াছিলেন।
অশোকের এই পরাক্রমশালী পিতামহ কিংবা তাঁহার পিতা বিন্দুসার বৌদ্ধ ছিলেন না। অশোক যখন এই সুবিস্তৃত রাজ্যের অধিকারী হইয়া বৌদ্ধধর্ম্ম গ্রহণ করেন, তখন এই ধর্ম্ম নিখিল ভারতে এবং ভারতের বাহিরে কোনো কোনো রাজ্যে প্রচারিত হইবার সুবর্ণ সুযোগ প্রাপ্ত হয়।
বৌদ্ধ ধর্ম্মের মাহাত্ম্য বর্দ্ধনের জন্য বৌদ্ধ যাজকগণ সম্রাট্ অশোকের সম্বন্ধে যে সকল গল্পের সৃষ্টি করিয়াছেন সেই সকল পাঠ করিলে মনে হয়, বৌদ্ধধর্ম্ম গ্রহণের পূর্ব্বে তিনি নৃশংস ও পাপাচারী ছিলেন, বৌদ্ধধর্ম্ম গ্রহণ করিয়া তিনি পুণ্যময় জীবন লাভ করেন। বৌদ্ধধর্ম্ম মহামতি অশোককে নবজীবন দান করিয়াছিল ইহা সত্য, কিন্তু তিনি উক্ত ধর্ম্মগ্রহণের পূর্ব্বে নিষ্ঠুর ও অধার্ম্মিক ছিলেন তাহা মনে করিবার পক্ষে কোন যুক্তিযুক্ত কারণ দেখা যায় না। বৌদ্ধ ধর্ম্মের প্রচার-ইতিহাসের শিরোভাগে মহামতি অশোকের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। ভগবান্ বুদ্ধের মৈত্রীমূলক ধর্ম্ম