পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম অধ্যায়
৪৩

পরিব্যাপ্ত করিবার জন্য সর্ব্বস্ব সমর্পণ করিয়াছিলেন। বৌদ্ধধর্ম্ম প্রচারের জন্য তিনি তাঁহার পুত্র মহেন্দ্র ও দুহিতা সঙ্ঘমিত্রাকে সিংহলে পাঠাইয়াছিলেন। সিংহলরাজ তিস্‌স এই ধর্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। সিংহলরাজকুমারী অনুলা সঙ্ঘমিত্রার নিকট দীক্ষা গ্রহণ করিয়া বৌদ্ধ ভিক্ষুণী হইয়াছিলেন।

 রাজর্ষি অশোক এমন ধর্ম্মানুরাগী ছিলেন যে, ধর্ম্ম তাঁহার নিকট পুত্ত্র, কলত্র ও বিত্ত হইতেও প্রিয়তর ছিল। দেশের সর্ব্বত্র লোকের মনে বৌদ্ধধর্ম্মের মহত্ত্ব ও সুনীতি মুদ্রিত করিয়া দিবার অভিপ্রায়ে তিনি কত স্তূপ, কত মন্দির নির্ম্মাণ করাইয়া ছিলেন তাহার যথার্থ সংখ্যা এখনও নির্ণীত হয় নাই। গিরিগাত্রে এবং ক্ষুদ্র বৃহৎ শিলাস্তম্ভে বৌদ্ধধর্ম্মের সুনীতি ও সদুপদেশ উৎকীর্ণ করাইয়া লোককল্যাণ সাধনে তিনি যেমন আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা দেখাইয়াছেন এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে আর দেখা যায় না।

 তাঁহার শিলালিপি ও স্তম্ভলিপি দ্বারা তিনি লোকসাধারণকে এই অনুরোধ জানাইয়াছেন—(১) কেহ প্রাণী হত্যা করিও না (২) প্রধান প্রধান নগরে আড়ম্বরপূর্ণ ভোজ প্রদান করিও না (৩) মাতাপিতার বশ্যতা স্বীকার কল্যাণপ্রদ (৪) বন্ধু ও স্বজনবর্গ, আত্মীয়কুটম্ব, ব্রাহ্মণ ও ভিক্ষুদের প্রতি বদান্য হওয়া বিধেয়। (৫) মিতব্যয়ী ও বিবাদে নিবৃত্ত হওয়া অতি উত্তম। (৬) আত্মসংযম, চিত্তশুদ্ধি, কৃতজ্ঞতা ও বিশ্বস্ততা এই কয়টিগুণ অতি উৎকৃষ্ট, দরিদ্রেরাও এই সকলগুণ প্রদর্শন করিতে পারে। (৭) লোকে আরোগ্যলাভ, বিবাহ, সন্তানলাভ, প্রভৃতি উপলক্ষ্যে আপন সৌভাগ্যে আনন্দ প্রকাশের জন্য উৎসব করিয়া থাকে। এই সকল উৎসব বিকৃত ও অকিঞ্চিৎকর। ধর্ম্মবিষয়ক উৎসবই বস্তুতঃ সৌভাগ্যজ্ঞাপক। ধর্ম্মোৎসবের মূলকথা দাসদাসী ও ভৃত্যবর্গের প্রতি যথাবিহিত ব্যবহার, গুরুজনের প্রতি সসম্মান ব্যবহার প্রাণীদের প্রতি অহিংসা, ব্রাহ্মণ ও ভিক্ষুদের প্রতি বদান্যতা। চির-কল্যাণ যাহার কাম্য তাহাকে এইরূপ উৎসবই করিতে হইবে। (৮) তোমার সহিত যাহার ধর্ম্মমত এক নহে এমন গৃহী অথবা