উপর পতিত হইয়াছিল। সঙ্ঘ যখন বৃহৎ হইয়া দেশবাসীর দৃষ্টি বিশেষভাবে আকর্ষণ করিল তখন হইতে সঙ্ঘের সাধুদের আচারব্যবহার, ক্লিয়া-কর্ম্ম দেশবাসীর সমালোচনার বিষয় হইল। দেশবাসীদের অভিপ্রায় সঙ্ঘবাসীদের আচার-ব্যবহার নিয়মিত করিতেছিল। এইরপে বৌদ্ধসঙ্ঘ এক বিরাট জনসঙ্ঘে পরিণত হইল।
বৌদ্ধভিক্ষুগণ নগরের বাহিরে প্রকৃতির সুরম্য নিকেতনে নিভৃতে বিহারে বাস করিতেন। বৌদ্ধভিক্ষুদের এই বিহারগুলিই সেকালে ধর্ম্ম ও শাস্ত্রালোচনার কেন্দ্র ছিল। সাধুরা শিষ্যদিগকে কেবল ধর্ম্ম নহে, জ্যোতিষ, আয়ুর্ব্বেদ, চিত্রকলা, ভাস্কর্য্য প্রভৃতি সর্ব্বপ্রকার পরা ও অপরা বিদ্যা শিক্ষা প্রদান করিতেন। এইরূপে ভগবান্ বুদ্ধের সাধনা হইতে প্রাচীন ভারতে যে আশ্চর্য্য সভ্যতার সৃষ্টি হইয়াছিল এই পুস্তকে তাহাই যথাসম্ভব সংক্ষেপে বর্ণিত হইয়াছে। যখন নদীতে বান আসে তখন খাল, বিল, নালা সমস্তই জলে পূর্ণ হইয়া যায়; বৌদ্ধধর্ম্মের অমৃতরসও সেইরূপ বানের মত ভারতবর্ষকে প্লাবিত করিয়াছিল। সেই প্লাবণ ভারতবর্ষ ছাপাইয়া দেশান্তরেও পরিব্যাপ্ত হইয়াছিল। এমনই এক অভাবনীয় আশ্চর্য্য ব্যাপার এই ভারতবর্ষে ঘটিয়াছিল। বৌদ্ধধর্ম্মের প্রসাদে এই দেশে আমরা এমন এক ভূপতি দেখিলাম যাঁহার তুলনা পৃথিবীর আর কোন দেশে পাওয়া যাইবে না। ধর্ম্মবলে তিনি এমন সংস্কারশূন্য হইয়াছিলেন যে, স্বধর্ম্মী বিধম্মী সকলকে তিনি তুল্যরপে ভালবাসিতেন। প্রজাদিগকে তিনি পুত্রবৎ পালন করিতেন। সাধারণ রাজার মত তিনি রাজস্ব আদায় এবং রাজ্যশাসন করিয়া স্বীয় কর্ত্তব্য শেষ করেন নাই। রাজ্যের সর্চ্চত্র যাহাতে ধর্ম্ম ও সুনীতি প্রতিপালিত হয় তৎজন্য বিশেষ কর্ম্মচারী নিযুক্ত এবং বিবিধ উপায় অবলম্ববন করিয়াছিলেন।
ঐতিহাসিকগণ যে যুগটিকে বৌদ্ধযুগ বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন এই গ্রন্থে সেই যুগের বহু পূর্ব্বের এবং পরবর্ত্তীকালের কোনো কোনো কথা লিপিবদ্ধ হইয়াছে। উহার কারণ পাঠকগণ অনায়াসেই উপলব্ধি করিতে পারিবেন। বৌদ্ধ-ভারত বৌদ্ধযুগের নহে, বৌদ্ধ-