ষষ্ঠ অধ্যায়
বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়
শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় “তপোবন” প্রবন্ধে লিখিয়াছেন —“ভারতবর্ষে এই একটি আশ্চর্য্য ব্যাপার দেখা গেছে, এখানকার সভ্যতার মূল প্রস্রবন সহরে নয়, বনে। ভারতবর্ষের প্রথমতম আশ্চর্য্য বিকাশ যেখানে দেখতে পাই সেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষ অত্যন্ত ঘেঁষাঘেঁষি করে একেবারে পিণ্ড পাকিয়ে ওঠেনি। সেখানে গাছপালা নদী-সরোবর মানুষের সঙ্গে মিলে থাকবার যথেষ্ট অবকাশ পেয়েছিল, সেখানে মানুষও ছিল, ফাঁকাও ছিল— ঠেলাঠেলি ছিল না। অথচ এই ফাঁকার ভারতবর্ষের চিত্তকে জড়প্রায় করে দেয়নি বরঞ্চ তার চেতনাকে আরও উজ্জ্বল করে দিয়েছিল।
“ভারতবর্ষের যে দুই বড় বড় প্রাচীন যুগ চলে গেছে, বৈদিক ও বৌদ্ধযুগ—সেই দুই যুগকে বনই ধাত্রীরূপে ধারণ করেছে। কেবল বৈদিক ঋষিরা নন, ভগবান্ বুদ্ধও কত আম্রবন, কত বেণুবনে তার উপদেশ বর্ষণ করেছেন—রাজপ্রাসাদে তাঁর স্থান কুলায়নি—বনই তাঁকে বুকে করে নিয়েছিল। সেই অরণ্যবাসনিঃসৃত সভ্যতার ধারা সমস্ত ভারতবর্ষকে অভিষিক্ত করে দিয়েছে এবং আজ পর্য্যন্ত তার প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়নি।”
বস্তুতঃই বৈদিক ও বৌদ্ধযুগে ভারতের তপঃক্ষেত্র হইতে সভ্যতার ধারা উৎসাকারে উৎসারিত হইয়া নিখিল ভারতে পরিব্যাপ্ত হইয়াছিল। তপোবনবাসী ঋষিদের আশ্রমে বিদ্যার্থী ধনি-দরিদ্র সকলে বিদ্যাশিক্ষার নিমিত্ত গমন করিতেন। ঋষি ছাত্রদিগকে অন্ন ও বিদ্যা উভয়ই দান করিতেন, আশ্রমবাসী শিষ্যগণ ব্রাহ্মমহূর্ত্তে গাত্রোত্থান করিয়া ধেনু চারণ, সমিধ, কুশ ও ফল আহরণ, কৃষিক্ষেত্রে জলসেচন ও বেদ অধ্যয়ন করিত। তখন পুস্তক ছিল না, গুরুর মুখে বেদ শ্রবণ করিয়া শিষ্যগণ উহা শিক্ষা করিত বলিয়া বেদের নাম ছিল শ্রুতি। সেই