পঞ্চাশ প্রকার সূত্রে ও শাস্ত্রে, পাঁচশত দ্বিতীয় শ্রেণীর অধ্যাপক ত্রিশ প্রকার সূত্রে ও শাস্ত্রে এবং এক সহস্র তৃতীয় শ্রেণীর অধ্যাপক বিশ প্রকার সূত্রে ও শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। যিনি এই অধ্যাপকমণ্ডলীর উপর অধ্যক্ষতা করিতেন তাঁহাকে সমস্ত ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধশাস্ত্রে অসামান্য পারদর্শিতা লাভ করিতে হইত, সতরাং অনন্যসুলভ বিদ্যাগৌরবসম্পন্ন না হইয়া কেহ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যক্ষতা লাভ করিতে পারিতেন না। শীলভদ্রনামক বঙ্গদেশীয় এক সুপণ্ডিত ব্যক্তি এক সময়ে এই গৌরবময় আসন অলঙ্কৃত করিয়াছিলেন। তিনি সমতট প্রদেশের এক রাজার পুত্ত্র। সুপ্রসিদ্ধ চীন পরিব্রাজক উয়ান চুয়াঙ্ এই বঙ্গদেশীয় পণ্ডিতের শিষ্যত্ব স্বীকার করিয়া নালন্দায় বিদ্যাশিক্ষা করিয়াছিলেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বিহার প্রদেশে অবস্থিত হইলেও বাঙ্গালীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘নিজস্ব’ বলিয়া মনে করিতেন। এখানে বহু বাঙ্গালী অধ্যাপক ও ছাত্র ছিলেন। তারপর বঙ্গের পালরাজাদিগের শাসনকালে বিহার তাঁহাদের শাসনাধীন ছিল। তখন তাঁহারা নালন্দা মঠের অধ্যক্ষ নিযুক্ত করিতেন।
উয়ান চুয়াঙ্ ৫ বৎসর নালন্দায় ছিলেন। তিনি লিখিয়াছিলেন —“উচ্চ প্রাচীরবেষ্টিত এই বিহার চিত্রে ও ভাস্কর্য্যে পরমরমণীয় শোভনশ্রী ধারণ করিয়াছিল, এখানে আটটি চতুষ্কোণ কক্ষ আছে, এখানকার বিহারসমূহের অভ্রভেদী উচ্চ গম্বুজ ও চূড়া প্রভাতশিশিরে অদৃশ্য হইয়া থাকে। ইহাদের বাতায়ন হইতে বায়ুর গতি ও মেঘের খেলা এবং উচ্চ ছাদ হইতে চন্দ্র ও সূর্য্যগ্রহণ উত্তমরূপে প্রত্যক্ষ করা যায়।”
অত্রত্য ছায়া-নিবিড় নিকুঞ্জ ও উদ্যানের শোভাদর্শনে পরিব্রাজক মোহিত হইয়াছিলেন। এখানে সরোবরসমূহের স্বচ্ছ-সলিলে নীলকমল প্রস্ফুটিত হইত, রক্তবর্ণ কুসুমে কনকতরু ঝল্মল্ করিত, শ্যামল পত্র-শোভিত আম্রবৃক্ষরাজি আনন্দপ্রদ ছায়া বিস্তার করিত।
পরিব্রাজক বলেন,—“এই সময়ে ভারতবর্ষে সহস্র সহস্র সঙ্ঘারাম ছিল, কিন্তু নালন্দার গৃহরাজি সৌন্দর্য্যে ও ঐশ্বর্য্যে এবং উচ্চতায়