তথাগত শ্রেষ্ঠীকন্যাকে শুদ্ধচরিত্রা বুঝিতে পারিয়াও তাঁহার হিতার্থে এক সভার আয়োজন করিলেন। সভায় ভিক্ষু, ভিক্ষণী, উপাসক, উপাসিকা সকলে সমবেত হইলেন। ভগবান্ বুদ্ধের নির্দ্দেশক্রমে স্থবির উপালি সভা স্থানে শ্রেষ্ঠীকন্যার বিবরণ বিবৃত করেন। উপালির আদেশে উপাসিকা বিশাখা যবনিকার অন্তরালে গমন করিয়া কন্যার সমস্ত অঙ্গ পরীক্ষা করিয়া সর্ব্বজন সমক্ষে ইহা ব্যক্ত করেন যে, শ্রেষ্ঠীকন্যা প্রব্রজ্যা গ্রহণের পূর্ব্বেই গর্ভবতী হইয়াছিলেন। ভগবান্ বুদ্ধের উপাশ্রয়ে এই কন্যা যথাকালে এক পুত্ত্র প্রসব করেন। রাজা প্রসেনজিত এই শিশুকে রাজভবনে লইয়া গিয়া পুত্ত্রবৎ পালন করেন। এইজন্য শিশু “কুমার কাশ্যপ” নামে খ্যাত হইয়াছিলেন।
একদিন সায়ংকালে জেতবনে ভিক্ষুগণ এই প্রসঙ্গে দেবব্রতের নিষ্ঠুরতা এবং পরমকারণিক বুদ্ধের বিচার ও দয়ার কথা বলাবলি করিতেছিলেন। তখন ভগবান্ বুদ্ধ বলেন,—অতীত জন্মেও দেবদত্ত কুমার কাশ্যপ ও তাঁহার জননীর সর্ব্বনাশ সাধনে উদ্যত হইয়াছিলেন, তখনও আমি ইহাদিগের উদ্ধার সাধন করিয়াছিলাম।
অতঃপর ভগবান্ বুদ্ধ ভিক্ষুদের অবগতির জন্য তাঁহার পূর্ব্ববর্ত্তী কোন এক জন্মের একটি আখ্যান বিবৃত করেন। উহাই জাতকের মূল অংশ বা অতীত বস্তু। “ন্যগ্রোধ-মৃগজাতকের” এই অংশ এইরূপ:—
পুরাকালে ব্রহ্মদত্ত যখন বারাণসী রাজ্যে রাজত্ব করিতেন তখন বোধিসত্ব তথায় হরিণরূপে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। সেই হরিণের গায়ের রং সোনার মত, শৃঙ্গের রং রূপার মত, এবং চক্ষু দুইটি মণির মত উজ্জ্বল ছিল। এই হরিণ “ন্যগ্রোধ-মৃগরাজ” নামে উক্ত হইতেন। তিনি পাঁচশত সঙ্গিসহ অরণ্যে বিচরণ করিতেন। নিকটে আরও একটি সোনার বর্ণ— হরিণ ইহার মত পঞ্চশত অনচেরসহ বিচরণ করিত। সেই হরিণের নাম ছিল “শাখামৃগ”।