পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম অধ্যায়
৭৫

 রাজা ব্রহ্মদত্ত মৃগমাংস প্রিয় ছিলেন। তাঁহার জন্য প্রত্যহ মৃগ বধ করিতে হইত। নগর ও জনপদবাসীরা মৃগ সংগ্রহের ক্লেশ হইতে অব্যাহতি লাভ করিবার জন্য বনের সমস্ত হরিণ তাড়াইয়া রাজার উদ্যান মৃগ-পূর্ণ করিয়া দিল। রাজা উদ্যানে গমন করিয়া শত শত হরিণ দেখিয়া আনন্দিত হইলেন। তিনি ন্যগ্রোধমৃগরাজ এবং শাখামৃগের আশ্চর্য্য রূপ দেখিয়া তাহাদিগকে অভয় প্রদান করিলেন।

 অতঃপর প্রত্যেক দিন উদ্যানের এক একটি মৃগকে শরবিদ্ধ করিয়া বধ করা হইত। ইহাতে সমস্ত মৃগগুলি ভীত এবং কোন কোন মৃগ আহত হইয়া ছুটাছুটি করিত। বোধিসত্ত্ব শাখামৃগের সহিত পরামর্শ করিয়া স্থির করিলেন যে, তাহাদের দুই দল হইতে পালাক্রমে এক একটি হরিণ ধর্ম্মগণ্ডিকার উপর গ্রীবা স্থাপন করিবে এবং রাজার পাচক সেই মৃগকে বধ করিবে।

 অনন্তর একদিন এক গর্ভিণী হরিণীর বার উপস্থিত হইল। সে দলপতি শাখামৃগকে গিয়া বলিল— “আমি সসত্ত্বা আমাকে ছাড়িয়া দিবার অননুমতি করুন।” শাখামৃগ বলিল— “ইহা তোমার অদৃষ্টের ফল, আমি তোমার পালা অন্যের স্কন্ধে চাপাইতে পারিব না।” অনন্যোপায় হইয়া সেই হরিণী বোধিসত্ত্বের নিকট গেল। সমস্ত কথা শনিয়া বোধিসত্ত্ব বলিলেন— তুমি স্বীয় দলে ফিরিয়া যাও, আমি তোমার প্রাণরক্ষার ব্যবস্থা করিতেছি।

 যথাসময়ে পাচক ধর্ম্মগণ্ডিকার নিকট উপস্থিত হইয়া বোধিসত্ত্বকে দেখিয়া বিস্মিত হইল। পাচক জানিত, রাজা এই মৃগরাজকে অভয় দিয়াছেন। সে তৎক্ষণাৎ রাজাকে এই সংবাদ দিল। পাত্রমিত্রসহ রাজা সেখানে আসিয়া বোধিসত্ত্বকে প্রশ্ন করিলেন,—মৃগরাজ, আমি ত তোমাকে অভয় দিয়াছি, তবে কেন তুমি গণ্ডিকায় মাথা দিয়াছ? বোধিসত্ত্ব উত্তর করিলেন, মহারাজ, আজ যে মৃগীর পালা ছিল, সে সসত্ত্বা, তাহার প্রাণ রক্ষার্থ আমি অন্যের প্রাণ নাশ করিতে পারি না, সেই জন্য নিজের প্রাণ দিয়া তাহার প্রাণ রক্ষা করিব স্থির করিয়াছি।