উল্লিখিত দৃষ্টান্ত হইতে পাঠকগণ জাতকের প্রকৃতি এবং উহার বিভিন্ন অংশের ধারণা করিতে পারিবেন। জাতকের ভূমিকা মূল জাতকের অপ্রধান অংশ বলিয়া উক্ত হইতে পারে।
জাতকের সংখ্যা সম্বন্ধে মতভেদ আছে। তিব্বত দেশের বৃহৎ জাতকমালায় ৫৬৫টি জাতক বর্ণিত হইয়াছে। অধ্যাপক ফৌস্বোল মহোদয় প্রণীত ‘জাতকার্থবর্ণনা' নামক পালি গ্রন্থে জাতক সংখ্যা ৫৪৭।
জাতকের প্রাচীনত্বে কাহারও সন্দেহ নাই। কিন্তু ঐতিহাসিক রিস্ডেভিডস্, প্রমূখ সুধীগণ বলেন—“সমস্ত জাতক এক সময়ে রচিত হয় নাই।” রচনার পার্থক্য, মূল জাতকের গাথাসমূহের ভাষাগত প্রভেদ প্রভৃতি দ্বারা ইহাই প্রতিপন্ন হইয়াছে যে, জাতকসমূহ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা রচিত হইয়াছে। বিনয় পিটক ও সূত্র পিটকের মধ্যে কতগুলি জাতক সন্নিবেশিত আছে। বৌদ্ধগণ বলেন—ভগবান বুদ্ধের পরিনির্ব্বাণ লাভের পরে সপ্তপর্ণী গুহায় যে মহাসঙ্গীতির অধিবেশন হইয়াছিল সেই সভায় ত্রিপিটক সঙ্কলন করা হইয়াছিল। কিন্তু বিদেশীয় অনেক পণ্ডিত মনে করেন, খৃষ্টপূর্ব্ব ৩৭০ অব্দে বৈশালী নগরে যে মহাসঙ্গীতির অধিবেশন হয় ত্রিপিটক সেই সভায় সঙ্কলিত হইয়াছিল। এই মত গ্রহণ করিলেও ইহা নিশ্চিত যে খৃষ্টের জন্মের অন্ততঃ ৩৭০ বৎসর পূর্ব্বে জাতকগুলি সঙ্কলিত হইয়াছিল। কিন্তু, জাতকবর্ণিত আখ্যানগুলি অন্ততঃ খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থার পরিচয় প্রদান করে তদবিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।
রিস্ডেভিডস্, বলেন—নন্দ ও মৌর্য্য ভূপতিগণের শাসনকালে পাটলীপুত্র নিখিল ভারতের রাজধানী হইয়াছিল। জাতকে নন্দ ও মৌর্য্য বংশের কিংবা পাটলীপুত্রের নাম দৃষ্ট হয় না। মৌর্য্য ভূপতিগণ নিখিল ভারতব্যাপী যে রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন জাতক সেই রাজ্যের উল্লেখ করে নাই। জাতক-আখ্যানে মদ্র, পাঞ্চাল, কোশল, বিদেহ, কাশী, বিদর্ভ— প্রভৃতি বৈদিক সাহিত্যবর্ণিত রাজ্য-